Skip to main content

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম।

তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হবার পর দোলনা দোলার ক্যাঁচম্যাঁচ শব্দ আসে, দেখিতো কারা ঢুকেছে তালা ভেঙে???" ব্যস ভয়ের চোটে আবার ঝপাং ঝাপ।

কিছুদিন আগে বাড়ীর সবাই মিলে পিকনিক করতে গেছিলাম ...স্পট বুক করার কথা দাদা বলতেই আমি জিজ্ঞেস করলুম "এই দাদা ... আশপাশে দোলনা আছে তো??" দাদার হ্যাঁবাচক উত্তরে মনে পিকনিকের আনন্দ দ্বিগুন হয়ে গেছিল৷ পিকনিকের দিন আম্রপালিতে ঢুকতেই খাওয়া-দাওয়া ভুলে খালি দোলনা দেখে তাতে আরাম করে চেপে দোল খেয়েই মন ভরাচ্ছিলাম ... কিন্তু খানিক পরেই ভাইপো-ভাইঝি আর তাদের বয়সি আরও খুঁদের দল ভিড় বাড়াল এবং একজন ধেড়েকে দোল খেতে দেখে যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে চিৎকার চেঁচামিচি লাগিয়ে বলল "নামো নামো আমরা চড়ব" ... আবার অনিচ্ছায় ঝপাং ঝাঁপ৷

অনেকেই আমায় বলে বাড়ীতে একটা দোলনা বসিয়ে নে ... সে গুড়েও রাশি রাশি বালি ... প্রায় ২০০-২৫০ বছরের পুরোন বাড়ীতে তেমন মন মতন জায়গা কোথায়??

তাই কোনভাবেই যখন ইচ্ছেপুরণ ঘটছে না তখন সাধপূরণের একটা সহজ ঘরোয়া উপায় মগজ থেকে বের করলুম৷ একে অপরকে সইবার তিনবছর যখন হবে হবে করছে এমন একদিনে কত্তা জিগেশ করল "বিবাহ-বার্ষিকিতে কি surprise নেবে বলত??" সাধপুরণের সহজ ঘরোয়া উপায়টা কায়দা করে বলে ফেললুম ... বললুম "তুমি দোল খাওয়ার একটা চেয়ার কিনে আমায় দারুন চমকে দাও তো দেখি!!"

এখন বেশ দিব্যি মজায় আছি ... ঝপাং ঝাপের ইতি ঘটিয়ে যতখুশি দোল খাও, কেউ বলবে না "ভেঙে পড়ল বলে" বা "কেন দোল খাচ্ছ!!!" বা "নামো , নামো তাড়াতাড়ি!! অনেকক্ষণ হয়ে গেছে৷"
দোল খাওয়ার পাকাপাকি ঠিকানা আমার নিজের মনের মতন "মনারাম (মন+আরাম) কেদারা"

(বি.দ্র: কত্তা কথা দিয়েছে ভেঙে গেলে আবার একটা করিয়ে দেবে)



Comments

Popular posts from this blog

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

ডুয়ার্স সফরনামা: প্রথম দিনের কাহন

গতবছর উড়িষ্যা ট্রিপে বসেই ঠিক হয়েছিল এবছরের ডেস্টিনেশন ডুয়ার্স। প্রস্তাবটা অনির্বানই দিয়েছিলো। চল এবার ডুয়ার্স যাই, বক্সা-লেপচাখা-জয়ন্তী আর ফেরার পথে কোনো একটা জঙ্গল। প্রস্তুতি শুরু হলো সেই মতন। প্রতিবারই যা হয় - কটা টিকিট কাটা হবে সেই নিয়ে টানাপোড়েন। এই চার মাস আগে টিকিট কাটার গপ্পোটা বড্ড ঝামেলার। তাই মোটামুটি গড়ে হিসেব করে ৯ টা টিকিট কাটা হলো। উত্তরবঙ্গে যাওয়া পাকা ।টিকিট কাটার ঝঞ্ঝাট নিয়ে আমি গপ্পো ফেঁদে বসলাম। (দ্রঃ  টিকিটপুরাণ ) ফেরার টিকিটের দিনই হলো ঝামেলা। কাঞ্চনকন্যায় ওয়েটিং হয়ে গেলো। কুমার কত্তার সব কাজ একদম যথাযথ হওয়া চাই, তাই কনফার্ম হয়ে যাবে এই আশা রেখেও পরের দিনে কাঞ্চনজঙ্ঘায় কনফার্ম টিকিট কেটে রাখলো। মাসবদলের সাথে সাথে আমাদের যাওয়ার সদস্য সংখ্যাও পাল্টাতে থাকে। কখনো ৯ থেকে ৭ কখনো বা ৫ আবার কখনো ৬। দীপঙ্কর দা মানে যিনি আমাদের ডুয়ার্সের দিনযাপনের ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ন দায়িত্বে ছিলেন তারও মাথা খেতে থাকি। কখনও বলি ৯ জন যাচ্ছি না ৭ জন, কখনও বলি  ৫ জন কনফার্মই কনফার্ম; আবার যাওয়ার একমাস আগে বলি, একটু ম্যানেজ করে  ৮ জনের ব্যবস্থা করে দাও। কিভাবে যে উনি সবটা অ্যা...