Skip to main content

একটি " HONUDAY " র ইতিবৃত্ত

মানুষের জীবনে কত জ্বালা তার নেই ঠিক ৷ আজ ইস্কুল ডুব মেরেছি,ভাবলুম আহ সারাদিনটা বেশ জমিয়ে ল্যাদ খাওয়া যাবে ৷ সকাল সকাল কত্তা কলেজে বেরিয়ে যাবার পর ঘন্টাখানেক শরীরচর্চার করে ওপরে গেছি জলখাবার খেতে.....

আমাদের রান্নাঘর দোতলায়৷ একতলা থেকে দোতলায় যাবার সিড়িটা বাইরের উঠোনের দিকে৷ দোতলায় উঠে একটা ছোট খোলা ছাত৷ ছাত থেকে দুটো সিঁড়ি উঠলে, রান্নাঘর লাগোয়া লম্বাআআ দালান ৷ দোতলার দরজা দিয়ে ঢুকে দালানের যে অংশ সেখানে ডাইনিং টেবিল , ফ্রীজ, মাইক্রোওয়েভ রাখা অন্যদিকে একটা ডিভান , বেতের চেয়ার আর টি.ভি. ৷ ৷ বাড়ীর এত ভৌগলিক বিবরণ কেন দিচ্ছি তা ক্রমশ প্রকাশ্য৷

তা যেটা বলছিলুম ,ওপরে গেছি জলখাবার খেতে , জলখাবার গুছিয়ে ডিভানের ওপর বাবু হয়ে বসে মনের আনন্দে টি.ভি দেখতে দেখতে খাচ্ছি ৷ হঠাৎ ওপরের ছাতে দুমদাম,ধুপধাপ আওয়াজ৷ বুঝলুম হনুর দল এসে আম গাছে উৎপাত চলাচ্ছে ৷ তা খাচ্ছে খাক কি আর হবে এই ভেবে নিজের খাওয়া আর বোকাবাক্সেই মন দিলুম....খাওয়া শেষ হতে সিঙ্কে এ থালা রাখতে যাব এমন সময় ঘাড় ঘোরাতেই দেখি এক আস্ত বিশাল বীর হনু গাছ থেকে লাফ দিয়ে ছোট ছাত হয়ে দরজা দিয়ে ঢুকে ডাইনিং টেবিলের এর দিকে তাকিয়ে বসে পড়ল ৷ তাকে দেখেই তো আমার আত্মারাম খাঁচা হয়ে গেছে !!! কোনরকমে মা'কে মানে শাশুড়িকে হাঁক পাড়লাম, "মা....মাআআআ....হহহনুমান" ৷ মা পাশের ঘরে সবে চান করে বেরিয়ে চুল আঁচরাচ্ছে ৷ মা বলে কোথায় ????? আমি কোনরকমে বললুম, " দালানেএএ!!" মা তড়িঘড়ি একটা লাঠি নিয়ে বেরিয়ে এসে "যাহ্ যাহ্ " করল ৷ হনুবাবাজীবন বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে গোল গোল চোখ করে টেবিলে রাখা ....ভাতের কুকার..মোচার ঘন্টো... শাক ভাজা...আমের টক...মাছের ঝাল...মিষ্টির কৌটো....বোঁদের প্যাকেটের দিকে জুল জুল করে চোখ বোলাচ্ছে.. মা আরও দু বার যাহ্ যাহ্ করতে ..ঝপাং ঝপাং করে লাফ দিয়ে ছোঁওওও মেরে বোঁদের প্যাকেট নিয়ে ৩০ এবং ৬৭ বছুরে দুই মহিলাকে কাঁচকলা দেখিয়ে সে পগার পার হয়ে গেল৷
বোদের শোক ভুলে আমি আর মা দুজনেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললুম৷ কিন্তু সেই স্বত্বির নিশ্বাস শুনে অলক্ষ্যে হনুরাম মিটিমিটি হেঁসেছিলেন তা কি আর তখন বুঝেছিলুম !!!!

পাশের পাড়ার একটা বাচ্ছা মেয়ে আমার কাছে পড়ে ৷ ওর স্কুল ছুটি আর আমিও ডুব দিয়েছি তাই ওকে সকালেই পড়তে আসতে বলেছিলুম ৷ খেয়ে নিচে নেমে দেখলুম পড়তে এসেছে৷ শোবার ঘরে খাটের ওপর ওকে পড়াতে বসেছি , মনে মনে ভাবলুম , "দরজাটা বন্ধ করে দি আবার যদি হনু বাবাজীবনের আগমন ঘটে!!!" তারপর ভাবলুম, "নাহ্ !! এতক্ষোণে তারা অন্যত্র গমন করেছে নিশ্চয়ই... " ৷ ভাবনা শেষ হতে না হতেই দেখি কোথা থেকে না জানি ঝপ করে লাফ দিয়ে উঠোন হয়ে হনু বাবু একেবারে আমার ঘরের মধ্যে ঢুকে এসেছে৷ ভুরু কুচকে কত্তার বইয়ের আলমারি , টেবিলে রাখা লেপটপ এর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ বেচারা বাচ্ছা মেয়েটা তো ভয় পাবেই.... ওর দ্বিগুণ বয়সীরই ভয়ে হাত পা ফেটে সেঁধিয়ে যাবার জোগার৷ তাও দুবার অতি কষ্টে সাহস করে যাহ্ করলাম....তাতে হনুবাবু বুঝে গেলেন এর দ্বারা আর যাই হোক আমাকে তাড়ানো সম্ভব নয় ৷ তাই smartly সে এক লাফে কত্তার পড়ার টেবিলের ওপর উঠে বসে কটমট করে আমার দিকে চেয়ে রইল ৷ সে এসেছে খাবারের খোজে কিন্তু এই গ্রন্থপাহাড় ঘরে সে খাবার আর পাবে কোথায়?? আমি বাচ্ছা মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলুম৷ একবার খুলে উঁকি মেরে দেখলুম গেছে নাকি....ওমা , সে দেখি সেই একই জায়গায় গেট্টি মেরে বসে আছে এবং সেও আমায় উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছে৷ ২-৩ বার একই ঘটনা ঘটল... কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে ওপরে মা কে ফোন করে সব বললুম ..... মা বাবাকে বলতে, বাবা একটা লাঠি নিয়ে নেমে এসে শেষমেশ হনুবাবুকে বিদায় করে হাক দিল " কই, কোথায় ??? বেরিয়ে এসো...তিনি দূর হয়েছেন ৷"

শুধু আফশোষ থেকে গেল.... যে আমার " হলিডে " কে "হনুডে " করে দিল , সেই পূর্বপুরুষের সাথে নিজস্বি নেওয়ার এতবড় সুযোগটা একদম হাতছাড়া হয়ে গেল।

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব

পুরনো কাসুন্দি

সালটা ২০০৮, বাবা মারা যাওয়ার কিছু মাস পর, আমার পরম পূজনীয় জননী একটু সামলে উঠতেই, স্থির করলেন এখন থেকে ওনার জীবনে একম-অদ্বিতীয়ম লক্ষ্য হলো আমার বিয়ে দেয়া। ভেবেছিলো আমায় "পার" করেই সব কাজ মিটে যাবে, আমি খাবো বাঁশ এবং তিনি ড্যাং ড্যাং করে বাবার কাছে চলে গিয়ে সুখে - শান্তিতে করবেন স্বর্গবাস। তখনও কুমার বাহাদুরের আগমন ঘটেনি বলাই বাহুল্য। মাকে আমি বুঝিয়ে উঠতে পারতাম না যে, দেখে-শুনে বিয়ের জগতে আমার "দাম " নেই বললেই চলে। বিয়ের খদ্দেরদের ফর্সা, সুন্দরী, স্লিম এবং শিক্ষিত মেয়ে চাই। অনেকের আবার শিক্ষিত হলেও আপত্তি। সুতরাং সে গুড়ে রাশি রাশি বালি। তবুও মার অদম্য ইচ্ছে, শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা এবং ইমোশনাল কাতুকুতুর কাছে হার মেনে "দেখে-শুনে বিয়ে" পুজোর জোগাড়ে নেমে পড়ি। এই পুজোর সর্বপ্রথম নিয়ম, সুন্দর শাড়ি পরে, ভালো করে সাজুগুজু করে একটি ছবি তুলতে হবে।যাতে পাত্রপক্ষ ঝপ করে দেখে টপ করে পছন্দ করে ফেলে। তাই হলো সুন্দর সাজু গুজু এবং শাড়ী পরে ছবি তোলা হলো। এই ছবিটি যে কত জায়গায় ঘুরেছে তার ঠিক নেই। আত্মীয়-পরিজন, ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট, কুরিয়ার অফিস, খবরের কাগজের অফিস, ই-মেল

টিকিটপুরাণ

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কাটা আর টানটান রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস পড়া একই ব্যাপার। প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা, এই ফসকে গেল গেল হৃদকম্পে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আমাদের আজ টিকিট কাটার পর্ব ছিল। নিজেরাই কাটি। দায়িত্ব থাকে কুমার বাহাদুরের ওপর। কাল রাত্তির থেকে যুদ্ধ চলছে। প্রতিবার বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের whatsapp এ একটা গ্রূপ খুলে ফেলার দায়িত্বে থাকি আমি। যাওয়ার ঠিকানা বদলাতে থাকে , সঙ্গে গ্রূপের নামও। কাল রাত্তির থেকেই আমরা খুব উত্তেজিত, কারণ irctc র সাইট খুলে দেখা গেছে ৪ মাস আগে যে তারিখের টিকিট বুক করা যাচ্ছে, সেটা সেদিনই ওয়েটিং এ চলে যাচ্ছে। তাই একদম ঝপাঝপ কাজ সারতে হবে। নানা রকম আলোচনায় রাত্তির থেকে whtsapp এর গ্রূপ উত্তাল। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত, লক্ষ একটাই,কনফার্ম টিকিট চাই-ই চাই। সবার স্নায়ু টান টান কাল কি হবে, একেবারে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল খেলার মতন। রাতে শুয়েই পড়েছি হঠাৎ whtsapp গ্রূপে অংশুমানের মেসেজ রাত ১২ টার পর টিকিট কাটা যাবে মনে হয়। মেসেজ পড়া মাত্রই কুমার বাহাদুর ঝপ করে উঠে ল্যাপটপ খুলে বসল কিন্তু কোথায় কি !!! আবার অংশুমানের মেসেজ," না ১২ টা