Skip to main content

মেয়ে-মা মা-মেয়ে

আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা ৫৮য় পা দিল ৷

বড় হবার রাস্তায় হাটতে হাটতে কবে কখন মা যে মেয়ে হয়ে গেছিল বুঝতেই পারিনি ৷ সংসারের নানান সমস্যা যেগুলো কাউকে বলতে পারত না , সেগুলোর জন্য আমি থাকতাম ৷মাথা গরম হলে তাকে সামলানো....মন খারাপ হলে মন হাল্কা করার চেষ্টা...শাড়ী পছন্দ থেকে বাড়ীর কাজে ক্লান্ত হওয়ার পর পায়ে তেল মালিশ করে দেওয়া ..... তার সবটা জুড়েই আমি , আমিই তার সব ৷ মেয়েটা আমায় বড্ড ভালোবাসে ৷

শুনেছিলাম মা হওয়া সহজ নয়.... ৯ বছর আগের সেই দিনটায় , যে দিনটা আমাদের জীবনটাকে একদম বদলে দিয়েছিল , আমার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করেছিল "এবার কি হবে?? আমি কি করব ??? তোর বাবা এভাবে চলে গেল ?? " আমার সবটুকু শক্তি দিয়ে নিজের যন্ত্রণাকে চাপা দিয়ে বুকের মধ্যে আগলে বলেছিলাম " আমি তো আছি ৷" মাথাটা প্রায় খারাপ হয়ে গেছিল ,অনেকটা আদর যত্ন ভরসা দিয়ে একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলাম ৷ ব্যাঙ্কের কাজ , বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ , টাকা পয়সা সামলানো , নিজের প্রয়োজনীয় কাজ কারও সাহায্য ছাড়াই একা করা যায়.....সবকিছু আস্তে আস্তে হাতে ধরে শিখিয়েছিলাম , কখনো আদর করে বুঝিয়ে কখনো বকাঝকা করে ৷ বুঝিয়েছিলাম হেরে গেলে হবে না ,অনেক মানুষ অনেক বেশী খারাপ অবস্থায় থাকে তাই নিজের জন্য, আমার জন্য ভালো থাকতেই হবে , লড়তে হবে ৷ সময় লেগেছিল ... কিন্তু মেয়েটা আমার পেরেছিল নতুন ভাবে শুরু করতে ৷ মেয়েটা আমার খুব বাধ্য ৷

গতবছর অব্দি আমার মেয়ের জন্মদিনে তার ৭২ বছুরে মা 'র ফোন আসত সকাল সকাল সবার আগে ৷ কিন্তু গত বছর তিনিও তাঁর আদরের মেয়ের সব দায়িত্ব আমায় দিয়ে চলে গেলেন ৷ এ বছর মেয়েটার আমার খুব কষ্ট হবে জানি , একা একা কেঁদে ভাসাবে ৷ মেয়েটা আমার বড্ড নরম যে!!

তাই সকাল সকাল যাচ্ছি মেয়েটার কাছে ৷ কেক আর পায়েস বানিয়ে নিয়েছি চটপট , শুধু একটাই চিন্তা পায়েসটা কেমন খেতে হলো কে জানে??? মিষ্টি ঠিকঠাক হলো কিনা !!! আজ যে চাখতে পারিনি , মেয়ের জন্মদিনের পায়েস যে মা'কে খেতে নেই ৷

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

কন্যের কেশ কথন

ছোটবেলা থেকেই আমার লম্বা ঘন চুল ছিল। খুব ভালো লাগতো আমার। মা মাঝে মধ্যে গজগজ করতো। তার কারণও ছিল অবশ্য। সকালে স্কুলে বেড়োতাম ৮.৩০ টায়। ভোর বেলা উঠে কাজ গুছিয়ে, রান্না করে, আমার টিফিন তৈরি করে তারপর বসতে হত মাকে আমার চুল বাঁধতে। স্কুলের নিয়ম ছিল বড় চুল মানেই দুটো বিনুনি বেঁধে যেতে হবে। প্রায়ই বলত,"উফ তোর চুল বাঁধতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়, দেব ছোট করে এবার।" আমার সাপোর্টে সবসময় ছিল বড়মা। বলত চিন্তা করিস না; তোর মা অমন বলছে, আমি কাটতে দেবই না তোর চুল। আর তাছাড়া আমিও জানতাম মার ওসব কথার কথা। একটু বড় হতে মজা করে যদি বলতাম ভাবছি চুলটা কেটেই দেবো, ওমনি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলতো, "খবরদার, একদম নয়।" সেই থেকে লম্বা ঘন একঢাল চুল। খুব ভালো লাগতো আমার। দেখতে শুনতে কোনদিনই তেমন ছিলাম না। কিন্তু আমার চুল দেখেই নিজেরই মন ভরে যেত। স্কুল থেকে ফিরলে সন্ধ্যে বেলায় মা কালো কার দিয়ে বেড়া বিনুনি বেঁধে দিত। কি যে অদ্ভুত দেখতে লাগতো তারপর কি বলবো। রাত্তির বেলায় চিত হয়ে শুতেই পারতুম না, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যেত, পাশ ফিরে শুতে হতো ।  বাবা মারা যাওয়ার পর, নিয়ম-কানুন মেটার ১৩ দিন পর যখন চুল ...