Skip to main content

মনপুরাণ

আমার জীবনের অনেক ভালো দিকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দিক হলো আমার এই ultra sensitive স্বভাবখানা ৷ আর এই উৎপাতে স্বভাবের মেন ভিলেন হলেন আমার "মন"৷ আজ্ঞে হ্যাঁ!! এই যে মন, তিনি সবাআআর কথা ভাবেন, সবার দিক বুঝতে চান, সবার মন পাওয়ার মতন অসম্ভব কাজ করে গিয়ে আছাড় খান এবং এই সকল কাজের দ্বারা তিনি নিজের ওজন বাড়ান৷ যা ঘটছে, ঘটে গেছে বা ঘটতে পারে আন্দাজ করতে চেয়ে সেই ভাবনায় ডোবেন, তাকে যে ভালোবাসে তার জন্য ভাবেন, যে তাকে মন্দবাসে ,সে কেন মন্দবাসছে, তার দিক টাও ভাবেন, কেউ একচিলতে প্রশংসা করলে আল্হাদে আটখানা হয়ে যান, আবার যদি কেও নিন্দে করে আঘাতে আটখানা হয়ে, যে নিন্দে করছে তার পক্ষ সমর্থনে যুক্তি সাজান ৷ উফফফ্!!! কি যে জ্বালা কি বলব!!!!! এনার সারাদিনের ধুকপুকানির চোটে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার জোগাঢ় ৷ বাপরে বাপ!!!!

মাঝে মাঝে মনে হয়, এই যে মন বাবুর অবস্থাখানা এক্কেবারে মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করার কাঁচের বাটির মতন হয়ে গেছে৷ ফ্রীজ থেকে বের করো ঠান্ডা, একটু সময় দাও স্বাভাবিক হওয়ার, তারপর গরম আঁচে চালান করো ৷ আবার গরম তাত থেকে বের করে, স্বাভাবিক হবার সময় দাও, তারপর তাকে ঠান্ডা জলে ধোও ৷ তাপমাত্রার উনিশ - বিশ হলেই, ফেটে চৌচির ৷ মনের অবস্থাও তাই, এক পরিস্থিতির তাপে অভ্যস্থ হতে না হতেই, আরেকখানা এসে হাজির, নাও ঠ্যালা সামলাও৷

কখনও আবার মনে হয় মন বাবুর জমিখানা নরম মাটির দলা না হয়ে রবারের হলে বেশ হতো .... নুড়ি, কাঁকড়, ঢিল, পাটকেল, তীর, বর্শা যাই আসে নরম মাটি বলেই তো গেথে যায়, আটকে যায় ... সময়ের হিসেবে সরে গেলেও দাগটা থেকেই যায়৷ রবারের হলে, যা আসত, সওওব bounce back করতো, দিব্যি মজা হতো৷ আবার কখনও মনে হয় মন বাবু যদি মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার হতো, বেশ একটা বোতাম থাকতো, ইচ্ছে খুশি খোলা বন্ধ করা যেত, ইচ্ছে খুশি edit বা delete করা যেত, কি যে ভালো হতো ... এসবের কোনটাই হবার নয়৷ এতসব ভেবে, এতসবার কথা ভেবে, যখন মন বাবু পুরোপুরি তেঁতো হয়ে ভারে, ক্লান্তিতে নুইয়ে পড়েন, ভাবেন আর হয়তো কখন উঠে দাড়াতে পারবেন না, নিজেকেই নিজের অসহ্য লাগে, কেন একটু বদলে যেতে পারি না, অন্যরকম হতে পারি না ??? এই ভাবনায় আবার বিলীন হন, তখনই আর্বিভাব হয় আমার মনের ডাক্তারের ৷ সে নিজের ঠান্ডা, গরম, মিষ্টি, তেঁতো ওষুধ দিয়ে মন বাবুকে চাঙ্গা করে দেয়, আর বলে "এই বিটকেল মনটিকেই তো ভালোবেসেছিলাম, এটা শুধরে গেলে আমার কি হবে???"



Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

কন্যের কেশ কথন

ছোটবেলা থেকেই আমার লম্বা ঘন চুল ছিল। খুব ভালো লাগতো আমার। মা মাঝে মধ্যে গজগজ করতো। তার কারণও ছিল অবশ্য। সকালে স্কুলে বেড়োতাম ৮.৩০ টায়। ভোর বেলা উঠে কাজ গুছিয়ে, রান্না করে, আমার টিফিন তৈরি করে তারপর বসতে হত মাকে আমার চুল বাঁধতে। স্কুলের নিয়ম ছিল বড় চুল মানেই দুটো বিনুনি বেঁধে যেতে হবে। প্রায়ই বলত,"উফ তোর চুল বাঁধতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়, দেব ছোট করে এবার।" আমার সাপোর্টে সবসময় ছিল বড়মা। বলত চিন্তা করিস না; তোর মা অমন বলছে, আমি কাটতে দেবই না তোর চুল। আর তাছাড়া আমিও জানতাম মার ওসব কথার কথা। একটু বড় হতে মজা করে যদি বলতাম ভাবছি চুলটা কেটেই দেবো, ওমনি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলতো, "খবরদার, একদম নয়।" সেই থেকে লম্বা ঘন একঢাল চুল। খুব ভালো লাগতো আমার। দেখতে শুনতে কোনদিনই তেমন ছিলাম না। কিন্তু আমার চুল দেখেই নিজেরই মন ভরে যেত। স্কুল থেকে ফিরলে সন্ধ্যে বেলায় মা কালো কার দিয়ে বেড়া বিনুনি বেঁধে দিত। কি যে অদ্ভুত দেখতে লাগতো তারপর কি বলবো। রাত্তির বেলায় চিত হয়ে শুতেই পারতুম না, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যেত, পাশ ফিরে শুতে হতো ।  বাবা মারা যাওয়ার পর, নিয়ম-কানুন মেটার ১৩ দিন পর যখন চুল ...