Skip to main content

মেঘের সঙ্গে রেষারেষি

এই গত মঙ্গলবারের কথা, একটা জমজমাটি রোমহর্ষক রেস হলো বটে৷ সেই ছোটবেলায় স্কুলে যেমন হতো, কে আগে ফিনিসিং লাইন বা ফিনিসিং পয়েন্টে পৌছতে পারবে, ঠিক সেরকম ৷ কম্পিটিটর খুবই ষ্ট্রঙ্গ ছিল , তাকে হারানো মুখের কথা নয়৷ তবুও তাকে হারিয়ে ছেড়েছি, হার মানতে বাধ্য করেছি৷
কুমার বাহাদুরের কলেজে পরীক্ষা না থাকায় তাড়াতাড়ি যাওয়া ছিল না৷ আমায় স্কুলে নামিয়ে ও কলেজ যাবে বলল৷ তৈরি হয়ে উড়ুক্কু যানে বসার সময়ই আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি করণ জোহাড়ের কভি খুশি কভি গম চলছে মানে কোথাও একগুচ্ছ মুখগোমড়া মেঘ, কোথাও আবার ঝলমলে আকাশ৷ গোমরামুখোটা আমাদের মাথার ওপরই ঘুরপাক খাচ্ছিল৷ কত্তা বলল,
"দুজনেই রেন কোটটা পড়েই বেরোই , যখন তখন নামতে পারে ৷"
"একদম না, এই পচা গরমে অসম্ভব , ঐ রেনকোট পরে, বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা৷ আর তাছাড়া দেখো না এই খানে গোমড়ামুখোটা রয়েছে, জোরে চালিয়ে ঐ দিকের সাদা আকাশের নিচে চলে গেলে আর ভেজাতে পারবে না৷"
"আরে , অমন হয় নাকি, আমরা ঐ দিকে যাওয়ার আগেই মেঘ পৌছে যাবে৷"
"না আমরাই আগে যাব৷"
"উফ, তুমি এমন পুচকিপনা করো না, তুমি কি এখন মেঘের সাথে রেস করবে নাকি???"
"হ্যাঁ, আর আমরাই জিতব, তুমি একদম উড়িয়ে নিয়ে চলো আমাদের উড়ুক্কুযানকে৷"
আর কি করে, আমার জোরাজুরিতে রাজী না হয়ে আর যায় কোথায়৷ এত কথাবার্তায়, ততক্ষণে গোমড়ামুখো মেঘের মুখ আরও গোমড়া হয়ে, কালো হয়ে এসেছে৷ আমাদের উড়ুক্কু ছুটছে, আর আমাদের তাড়া করছে ঐ মুখগোমড়া৷ আমরা যত এগোচ্ছি, rear view এ দেখছি সে আমাদের পিছু ছাড়েনি, ঘন কালো মুখ নিয়ে ধেয়ে আসছে৷ আমরাও ছুটছি, উনিও এগোচ্ছেন৷ বাবুরবাজারের কাছাকাছি পৌছতে, প্রায় ধরেই ফেলেছিল , ইলশে গুড়ির ছড়া দিয়ে, আমাদের জানান দিচ্ছিলঃ "আমার থেকে জিতবে??? এই ধরে ফেললাম বলে৷" কিন্তু না আমরা আরও জোরে ছুটে, ইলশে গুড়ির জাল কেটে বেরিয়ে, ফিনিশিং লাইনে প্রায় পৌছেই গেছি , rear view নজর পড়তেই দেখলাম, হেরে যাওয়ার রোষে, পুরো আকাশকে একসাথে নিয়ে, জলের ট্যাঙ্ক বোঝাই করে ভেঙে পড়ব পড়ব করছে, আমাদের হারানোর জন্য পুরোদমে প্রস্তুত৷ কিন্তু হায় রে, ততক্ষণে রেস শেষ৷ আমায় স্কুলের সামনে নামিয়ে, একটা শেডের তলায় দাঁড়াতে, আমি বিজয়িনীর হাসি হেসে গোমড়ামুখোর দিকে দেখতেই, রাগে ,দুঃখে হুড়মুড়িয়ে সজোরে আছড়ে পড়ল৷ ঐ অঝোর ধারা দেখে মনে হলো, ইসস কেন যে স্কুল থেকে ফেরার সময় এমন হলো না, ইচ্ছে করে মনের আনন্দে হেরে যেতুম৷
আশপাসে কিছু ছাত্রছাত্রী ঘোরাঘুরি করছিল, তাই মনে মনে বলে উঠলুমঃ
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
বড্ড ভালোবাসি তোকে
কিন্তু এখন ভিজতে পারব না যে মোটে
তাইতো হারিয়ে দিলেম তোকে৷

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

কন্যের কেশ কথন

ছোটবেলা থেকেই আমার লম্বা ঘন চুল ছিল। খুব ভালো লাগতো আমার। মা মাঝে মধ্যে গজগজ করতো। তার কারণও ছিল অবশ্য। সকালে স্কুলে বেড়োতাম ৮.৩০ টায়। ভোর বেলা উঠে কাজ গুছিয়ে, রান্না করে, আমার টিফিন তৈরি করে তারপর বসতে হত মাকে আমার চুল বাঁধতে। স্কুলের নিয়ম ছিল বড় চুল মানেই দুটো বিনুনি বেঁধে যেতে হবে। প্রায়ই বলত,"উফ তোর চুল বাঁধতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়, দেব ছোট করে এবার।" আমার সাপোর্টে সবসময় ছিল বড়মা। বলত চিন্তা করিস না; তোর মা অমন বলছে, আমি কাটতে দেবই না তোর চুল। আর তাছাড়া আমিও জানতাম মার ওসব কথার কথা। একটু বড় হতে মজা করে যদি বলতাম ভাবছি চুলটা কেটেই দেবো, ওমনি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলতো, "খবরদার, একদম নয়।" সেই থেকে লম্বা ঘন একঢাল চুল। খুব ভালো লাগতো আমার। দেখতে শুনতে কোনদিনই তেমন ছিলাম না। কিন্তু আমার চুল দেখেই নিজেরই মন ভরে যেত। স্কুল থেকে ফিরলে সন্ধ্যে বেলায় মা কালো কার দিয়ে বেড়া বিনুনি বেঁধে দিত। কি যে অদ্ভুত দেখতে লাগতো তারপর কি বলবো। রাত্তির বেলায় চিত হয়ে শুতেই পারতুম না, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যেত, পাশ ফিরে শুতে হতো ।  বাবা মারা যাওয়ার পর, নিয়ম-কানুন মেটার ১৩ দিন পর যখন চুল ...