Skip to main content

পুজোর গন্ধ

কুমার বাহাদুর আজ আমাদের বহু প্রতিক্ষার অানন্দমেলাকে বাড়ী এনেছে ৷ বইটা আমি হাতে পেতেই প্রতিবারের মতন......খুলে জোরে এক নিশ্বাস গন্ধকে মনের মধ্যে পুরে নিলাম ৷ এক নিমেষে মনে হলো অনেক গুলো বছর পেছনে চলে গেছি ......
স্কুলে যাওয়ার সময় খেতে বসে বাবা বলছে
"বুড়ু , যা যা পুজোসংখ্যা কিনবি লিষ্ট করে মিনি কাকু ( খবরের কাগজ দেয় যে কাকু) দিয়ে দিস.... ফুরিয়ে গেলে পাবি না "
"মিনি কাকুকে তিন দিন আগেই দিয়ে দিয়েছি....এখনও দেয়নি "
"বলেছিস যখন ঠিক দিয়ে দেবে ৷"
"কবেএএ???"
আর কিছু না বলে আমার পুজোসংখ্যা তখনও অব্দি না পাওয়ায় দুঃখ দুঃখ মুখখানা দেখে বাবা ইস্কুলে চলে গেল ৷ বিকেলে যখন ফিরল ব্যাগখানা আমার হাতে ধরিয়ে বলল
"এই নে , বলেছিলি রে & মার্টিন বইটা লাগবে ,আনতে দিয়েছিলাম লাল্টুকে ( বইয়ের দোকানের দাদা) , এনে দিয়েছে৷ "
আমি ব্যাজার মুখে ব্যাগ খুলতেই দেখি ভেতর থেকে উঁকি মারছে আমার বহু প্রতীক্ষিত পুজোসংখ্যা৷ আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঝপ করে বইটি খুলে এক নিশ্বাস গন্ধ মনের মধ্যে পুরে নিলাম ..... বাবা বলল ,
" শুধু গন্ধ শুকবি জানলে , বইগুলো এত তাড়াহুড়ো করে নিয়ে আসতাম না ৷ "
ছোটবেলায় পুজো মানেই ছিল পুজোসংখ্যা ৷ পুরো পুজোটাই কেটে যেত বইয়ে মুখ গুজে ৷ পুজোর জামার থেকে যে পুজোর বইয়ের ওপর মেয়ের টান বেশি এটা দেখে বাবা বেশ খুশিই হত৷
শুধু আজ না , প্রতি বছরই এই গন্ধটা নাকে আসতেই মনে হয় বাবা ঠিক পাশটাতে দাড়িয়ে আছে ৷ চোখ বন্ধ করে খুব কষ্ট করে একছুটে বেরিয়ে আসতে চাওয়া জলটাকে আটকে , বাবার থাকা - না-থাকার টানাপোড়েনে অস্থির হচ্ছি , হঠাৎ দেখি মাথায় একটা হাত , চোখ খুলতেই কুমার বাহাদুর নরম চোখে বলল ,
"শুধু কি গন্ধই শুকবে , দেখ এবারে অনেকগুলো রহস্য উপন্যাস আছে ৷ আর হ্যাঁ , আর কি কি কিনবে সে লিষ্টটা চটপট করে ফেল ৷"
আমার মনের ভার টের পেয়ে তা হাল্কা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ৷ 
বাবা তুমি নিশ্চিন্তে থাকো , তোমার বুড়ুর পুজোসংখ্যা ঠিক পুজোর আগে তার হাতে চলে আসবে ৷ একদম চিন্তা করো না , ইকটুকুও না ৷


Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

কন্যের কেশ কথন

ছোটবেলা থেকেই আমার লম্বা ঘন চুল ছিল। খুব ভালো লাগতো আমার। মা মাঝে মধ্যে গজগজ করতো। তার কারণও ছিল অবশ্য। সকালে স্কুলে বেড়োতাম ৮.৩০ টায়। ভোর বেলা উঠে কাজ গুছিয়ে, রান্না করে, আমার টিফিন তৈরি করে তারপর বসতে হত মাকে আমার চুল বাঁধতে। স্কুলের নিয়ম ছিল বড় চুল মানেই দুটো বিনুনি বেঁধে যেতে হবে। প্রায়ই বলত,"উফ তোর চুল বাঁধতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়, দেব ছোট করে এবার।" আমার সাপোর্টে সবসময় ছিল বড়মা। বলত চিন্তা করিস না; তোর মা অমন বলছে, আমি কাটতে দেবই না তোর চুল। আর তাছাড়া আমিও জানতাম মার ওসব কথার কথা। একটু বড় হতে মজা করে যদি বলতাম ভাবছি চুলটা কেটেই দেবো, ওমনি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলতো, "খবরদার, একদম নয়।" সেই থেকে লম্বা ঘন একঢাল চুল। খুব ভালো লাগতো আমার। দেখতে শুনতে কোনদিনই তেমন ছিলাম না। কিন্তু আমার চুল দেখেই নিজেরই মন ভরে যেত। স্কুল থেকে ফিরলে সন্ধ্যে বেলায় মা কালো কার দিয়ে বেড়া বিনুনি বেঁধে দিত। কি যে অদ্ভুত দেখতে লাগতো তারপর কি বলবো। রাত্তির বেলায় চিত হয়ে শুতেই পারতুম না, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যেত, পাশ ফিরে শুতে হতো ।  বাবা মারা যাওয়ার পর, নিয়ম-কানুন মেটার ১৩ দিন পর যখন চুল ...