Skip to main content

সারপ্রাইজের জন্মদিন

বছরের একটা দিন আছে যেটা শুধু আমার, যেদিন সবাই আমার কথা শুনবে , আমার সব আবদার , দাবী মানতে আমি বাধ্য করবো , সবাই ভালো - ভালো কথা বলবে , সেই দিনের আমিই রাজা ৷ সেটা বছরের একটাই দিন ,জন্মদিন ৷ এবছর ৩১ হলো , থুড়ি মা'র কথায় ৩০+ ৷ মা'তো পারলে বয়সটা তিনেই আটকে রাখে ৷ তো যা বলছিলুম , জন্মদিন ... প্রতি বছর আমি আমার জন্মদিন নিয়ে প্রবল উৎসাহিত থাকি, হ্যাঁ নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে বলব এই ৩১ এও আমার জন্মদিন নিয়ে উৎসাহে কোন ঘাটতি নেই আর আগামী যতগুলো বছর বাঁচবো একই উৎসাহপ্রথা চলতে থাকবে এ কথা হলফ করে বলতে পারি ৷ আগষ্ট মাস পড়লেই আমার মনে হতে থাকে ১২ তারিখ আসছে আসছে , মা'কে মনে করানোর দরকার পড়ে না , তিনি তো আমার এক কাঠি ওপরে ৷কিন্তু আমার ভুলো বরটা যাতে কোনভাবেই না ভোলে তার প্রস্তুতি পুরোপুরি নিয়েনি ৷ না বাবা , বর জন্মদিন ভুলে যাবে , তারপর জন্মদিনের সারাদিন মুড অফ করে মান - অভিমান করব, ঐ সব চক্কোরে আমি নেই ৷ তাই সপ্তাখানেক আগে থেকেই কাউন্টডাউন চালাতে থাকি ৷ যদিও ওর জন্য ঐদিন ভোলা খুব একটা সহজ না , একই দিনে বউ আর মা'র জন্মদিন হলে , সেইদিনটি ভোলা একটু চাপের ৷

প্রতি বছর কুমার বাহাদুর ঘোর চিন্তায় থাকেন যে আমায় তিনি কি দেবেন জন্মদিনে ৷ কারণ মা'র উপহার নিয়ে ওকে মাথাই ঘামাতে হয় না , আমি মা'র পছন্দমতন উপহার ঠিক সময়ে মা'কে দিয়ে দিই ৷আর তাছাড়া প্রতি বছর ওর জন্মদিনে আমার surprise দেওয়ার বহরে বেচারা আত্মগ্লানিতেও ভোগে ৷ তাই এবছর বহু কষ্টে , জীবনে প্রথমবার তিনি একখানা surprise gift এর প্ল্যান করেছিলেন ৷ যেটি দুদিন আগেই deliver হয়ে যায় , বাবা receive করে আমায় দেয়,আমি তাড়াহুড়োয় থাকায় ঘরে রেখে বেরিয়ে যাই ৷ ওমা , রাত্তিরবেলা প্যাকেট টা আমার দিকে দিয়ে বলে,"ধুউউউর.... surprise আর রইল কই ,এই যে তোমার surprise gift ৷" আমি ভাবলুম বোঝো ঠ্যালা!!!! জীবনে প্রথম সারপ্রাইজ দেবে , কোথায় জন্মদিনের রাত ১২টার সময় ঝুলি থেকে বেড়াল থুড়ি gift...না না surprise gift বের করে হাতে দেবে , তা না.... দুদিন আগে প্যাকেট হাতে ধরিয়ে বলে " নাও surprise!! " ৷ এতো হতে দেওয়া যায় না , এবছর যখন কুমার বাহাদুর তার বউকে surprise দেবেই ঠিক করছে , আমার নৈতিক দায়িত্ব তাকে সাহায্য করা ৷
প্যাকেটটা আমার দিকে ছুড়তে যাবে আমি চোখ বন্ধ করে বললুম , "না না নাআআঅ....অাজ না পরশু দিও , আর শোনো ওটাকে এমন জায়গায় লোকাও যেন আমি খুঁজলেও খুঁজে না পাই , বুঝলে ????" আমার এই অদ্ভুত প্রস্তাব শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় এক্সপ্রেশন দিয়ে দাড়িয়ে রইল ৷ উউউফ , এই লোকটাকে নিয়ে কি যে জ্বালা !!! আমি গিয়ে ওর হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলাম ৷ হাত দিতেই বুঝতে পাচ্ছিলুম , কি রয়েছে , কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মাথাকে দিয়ে মনকে আর মনকে দিয়ে মাথাকে জোরদার ধমক দেয়ালুম, " বেশি বুদ্ধি খাটালে , জন্মদিনে কিন্তু surprise পাওয়া যাবে না বলেদিলুম ৷" কুমার বাহাদুর আমার র্কীর্তি-কলাপ দেখে কি expression দেবে বুঝে না পেয়ে , তার প্রথমপক্ষে থুড়ি গপ্পোবইয়ে মনোনিবেশ করাই শ্রেয় মনে করল ৷

যাইহোক , শেষমেশ ১২ তারিখ ১২টা বাজতে প্রতি বছরের মতন চিঠি পেলুম আর পেলুম জবরদস্তির সারপ্রাইজ টিকিয়ে রাখা গিফ্ট ৷ প্যাকেট খুলে মাথা-মনের guess work কে salute জানিয়ে বললুম .... যা ভেবেছি ঠিক তাই , একখানা আস্ত ফোন , Redmi Note 4৷ সারপ্রাইজড হওয়ার সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চোখ বড় বড় করে দু - গালে হাত দিয়ে বললুম ," আরেএএএ কি করেছ , আমিতো ভাবতেই পারিনি দারুউউউণ হয়েছে ৷" কুমার বাহাদুর হাসতে হাসতে বলল ," তুমি পারো বটে , উফফ , নাটক থামাও , বললাম সেদিনই খুলে দেখো , এতদিনে sim ভরে use শুরু করে দিতে পারতে,তা না , উনি সারপ্রাইজ নেবেন , যাইহোক ভালোলেগেছে তো ৷" বললুম , " ভীষওওওণ , তবে ফোন পেয়ে নয় , সারপ্রাইজ পেয়ে ৷"

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব

পুরনো কাসুন্দি

সালটা ২০০৮, বাবা মারা যাওয়ার কিছু মাস পর, আমার পরম পূজনীয় জননী একটু সামলে উঠতেই, স্থির করলেন এখন থেকে ওনার জীবনে একম-অদ্বিতীয়ম লক্ষ্য হলো আমার বিয়ে দেয়া। ভেবেছিলো আমায় "পার" করেই সব কাজ মিটে যাবে, আমি খাবো বাঁশ এবং তিনি ড্যাং ড্যাং করে বাবার কাছে চলে গিয়ে সুখে - শান্তিতে করবেন স্বর্গবাস। তখনও কুমার বাহাদুরের আগমন ঘটেনি বলাই বাহুল্য। মাকে আমি বুঝিয়ে উঠতে পারতাম না যে, দেখে-শুনে বিয়ের জগতে আমার "দাম " নেই বললেই চলে। বিয়ের খদ্দেরদের ফর্সা, সুন্দরী, স্লিম এবং শিক্ষিত মেয়ে চাই। অনেকের আবার শিক্ষিত হলেও আপত্তি। সুতরাং সে গুড়ে রাশি রাশি বালি। তবুও মার অদম্য ইচ্ছে, শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা এবং ইমোশনাল কাতুকুতুর কাছে হার মেনে "দেখে-শুনে বিয়ে" পুজোর জোগাড়ে নেমে পড়ি। এই পুজোর সর্বপ্রথম নিয়ম, সুন্দর শাড়ি পরে, ভালো করে সাজুগুজু করে একটি ছবি তুলতে হবে।যাতে পাত্রপক্ষ ঝপ করে দেখে টপ করে পছন্দ করে ফেলে। তাই হলো সুন্দর সাজু গুজু এবং শাড়ী পরে ছবি তোলা হলো। এই ছবিটি যে কত জায়গায় ঘুরেছে তার ঠিক নেই। আত্মীয়-পরিজন, ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট, কুরিয়ার অফিস, খবরের কাগজের অফিস, ই-মেল

টিকিটপুরাণ

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কাটা আর টানটান রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস পড়া একই ব্যাপার। প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা, এই ফসকে গেল গেল হৃদকম্পে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আমাদের আজ টিকিট কাটার পর্ব ছিল। নিজেরাই কাটি। দায়িত্ব থাকে কুমার বাহাদুরের ওপর। কাল রাত্তির থেকে যুদ্ধ চলছে। প্রতিবার বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের whatsapp এ একটা গ্রূপ খুলে ফেলার দায়িত্বে থাকি আমি। যাওয়ার ঠিকানা বদলাতে থাকে , সঙ্গে গ্রূপের নামও। কাল রাত্তির থেকেই আমরা খুব উত্তেজিত, কারণ irctc র সাইট খুলে দেখা গেছে ৪ মাস আগে যে তারিখের টিকিট বুক করা যাচ্ছে, সেটা সেদিনই ওয়েটিং এ চলে যাচ্ছে। তাই একদম ঝপাঝপ কাজ সারতে হবে। নানা রকম আলোচনায় রাত্তির থেকে whtsapp এর গ্রূপ উত্তাল। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত, লক্ষ একটাই,কনফার্ম টিকিট চাই-ই চাই। সবার স্নায়ু টান টান কাল কি হবে, একেবারে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল খেলার মতন। রাতে শুয়েই পড়েছি হঠাৎ whtsapp গ্রূপে অংশুমানের মেসেজ রাত ১২ টার পর টিকিট কাটা যাবে মনে হয়। মেসেজ পড়া মাত্রই কুমার বাহাদুর ঝপ করে উঠে ল্যাপটপ খুলে বসল কিন্তু কোথায় কি !!! আবার অংশুমানের মেসেজ," না ১২ টা