Skip to main content

পথ রঙ্গ

রাস্তায় বেরোলে এত্ত কিছু ঘটতে থাকে আশপাশে যে বলতে শুরু করলে শেষ হইব না ৷ এইতো কাল, কুমারের সাথে বেড়িয়েছিলাম টুকটাক কাজে, উড়ুক্কু যানে মানে আমাদের বাহন honda activa তে চড়ে প্রথম পৌছলাম ছেলেদের জামাকাপড়ের দোকানে৷ আমার এক ভাই, যে কিনা ভাইফোঁটার আগেই বিদেশে পগার পাড় হবে তার জন্য একটা জামা কিনতে৷ কেনাকাটায় আমার একেবারেই রুচি নেই৷ তবুও প্রয়োজনে পড়লে যখন কিনতেই হয়, খুব বেশি সময় লাগে না ৷ ঝটপট দেখে চটপট কাজ সেরে ফেলি ৷ তো যা বলছিলুম জামা কেনা হয়ে গেলে , bill দেওয়ার অপেক্ষা করছি , আমাদের পাশে দাড়িয়ে কেনাকাটিং রত এক দম্পতির কথোপোকথন কানে এলঃ
স্বামী - কটা নেবে, একটা না দুটো?
স্ত্রী - আরে, দুটো তো নিতেই হবে ৷
স্বামী - (ভুরু কুঁচকে) একটা ২০০ র মধ্যে নাও আর একটা ৫০০ ৷
স্ত্রী - কেন?????
স্বামী - আরে যাবে তো সবই এক জায়গায় ৷তাছাড়া বড়ছেলে টা সরকারি চাকরি করে , ওর জন্য দামী নাও , ছোটটাতো বেকার , ওকে ফালতু দামী দিয়ে কি হবে ???
স্ত্রী - যাহ্ , এরকম হয় নাকি???
স্বামী : হয় হয়, GST র মার্কেটে সওব হয়।
স্ত্রী - উফ্ .... এর মধ্যে আবার GST এল কোথা থেকে ... তোমার সব ব্যাপারেই GST ...
GST র জন্য আর কি কি হয় তা দেখার বা শোনার সৌভাগ্য আর হলো না, আমাদের বিল চলে এল, ফলত কেনাকাটির প্যাকেট হাতে ঝুলিয়ে, মিষ্টি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে এলাম৷

উড়ুক্কুতে উঠতে উঠতে, পাঁচমাথার মোড় থেকে ভেসে আসা কোন এক রাজনৈতিক দলের বক্তৃতার এক টুক্ রো সংলাপ কানে এলঃ
"বন্ধুগণ , এই যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কাল ডি.এ প্রসঙ্গে আপনার বাবা কাকাকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন ... এর অর্থ কি ???? এর অর্থ আপনিও কুকুর ... মুখ্যমন্ত্রী আপনাকে বাচ্চা কুকুর বলে অপমান করেছেন .... আপনি কি এই অপমান মেনে নেবেন ?????"
এটা শুনে মনে হলো গিয়ে ভদ্রলোককে একবার উঁকি মেরে দেখে আসি আর আমার দুঃখের কথাও শুনিয়ে আসি .... আমারতো মা, বর, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং স্বয়ং আমি সকলেই সরকারি কর্মী বা পেনশেনভোগী - এর অর্থ আমি বাচ্চা কুকুর, বউ কুকুর , বউমা কুকুর এবং কুকুর ..... হা ঈশ্বর এক মানব জনমে এত কুকুরের ভার আমি বইব কেমনে!
কুমার উড়ুক্কুর ব্রেক চাপতে, তার ধাক্কায় ভাবনার জাল থেকে বেরিয়ে এলুম৷ দেখলুম, এক আইসক্রিম পার্লারের সামনে দাড়িয়ে৷ ঢুকে দুটো মিল্কসেক অডার দিয়ে বসে আছি, কুমারের পেছনে একটা টেবিলে অকারণে এবং ভুলভাল ইনজিরি বলা তিনটে স্কুল পড়ুয়া নিজেদের মধ্যে হাহা হিহিতে মশগুল৷ এত জোরে তারা গুলতানিতে মশগুল, যে আশপাশের লোকজন তাদের তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বরে ভীষণই বিব্রত, এমনকি দোকানের মালিকও৷ আমরা ঢুকতেই কানে এল দোকানের মালিক বলছেন, তোমাদের দুঘন্টা হল কিন্তু৷ যদিও তাতে তাদের টনক নড়েনি৷ তারা নিজেদের ফোন থেকে বিভিন্ন ছেলেদের ফোন করছে এবং তাদের বিরক্ত করছে। এবং এটা এতই জোরে করছে যে ঐ দোকানে উপস্হিত সকলে সেটা শুনতে পাচ্ছে ৷
প্রথম কন্যে - লেটস্ কলড আহকাশ ( আকাশ)
চশমা পড়া কন্যে - ওহ নট আগেন .... ডোন্ট ইউ নো শি হ্যাস আ গার্লফ্রেন্ড
আঁতেল কন্যে - সো হোয়াট ..... লেটস্ এনজয় ইয়ার , আমার থোড়াই ওর সাথে লাভ এন্ড অল করবো
এই ন্যাকামো চলল আরও আধঘন্টা, শেষমেশ দোকানের মালিক সোজাসুজি এসে আর যদি কিছু না লাগে তো উঠতে বলায় তিনজনে উঠে পড়ল৷ বাকি দুজন তৃতীয় জনকে বলল ওহ গড, সো মাচ ক্রাউড এখানে ... তুই পাহ্ লিজ ( please) পে করেদে .... বাইরে গিয়ে দিয়ে দিচ্ছি ৷
এরপর কি হলো জানিনা , আমরা আমাদের অডারের বকেয়া চুকিয়ে বেরিয়ে এসেছি৷ আমি দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, কুমার উড়ুক্কুতে কেনাকাটির প্যাকেটগুলো আটকাচ্ছে৷ মেয়েগুলোও দোকান থেকে বেরিয়ে খানিক দুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, হঠাৎ দেখি দোকানের ওয়েটার এসে মেয়েগুলোকে পাকড়াও করেছে .... তারা নাকি পুরো বিল না দিয়েই কেটে পড়ার তাল করছিল ৷ কি কান্ড !!!!

উড়ুক্কুর পরবর্তী গন্তব্যস্হল চিঁড়ে - মুড়কির দোকান ৷ আমি দোকানে চিঁড়ে - খই কিনছি, কুমার একটু দুরে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে ৷ জিনিষ গুলো নিয়ে দাম দেওয়ার সময় আমার কাছে খুচরোর কিছু সমস্যা হওয়ায়, কুমারের কাছে চাইতে গিয়ে দেখি, অতীব শীর্ণ কায়া এক ভদ্রোলোক হাতে পেন ও ডায়েরি নিয়ে গভীর ভাবে কুমারকে কিছু বোঝাচ্ছে এবং মাঝে মাঝে কাশছেন৷ কুমার as usual ওর least interested expression দিয়ে ভদ্রলোকের কথা শুনছে৷ আমি কুমারের থেকে খুচরো নিয়ে দোকানে দাম মিটিয়ে ফিরে এসে দেখি সে ব্যক্তি হাওয়া৷ কুমার কে শুধলাম - কেস কি?
- মুরগী খুজছে!
 - মানে????
 - চন্দননগরে একটি health centre খুলেছে, যেখানে সারাজীবন ওষুধ না খেয়েও কিভাবে সুস্থ থাকা যায় তার জ্ঞান বিতরণ এবং প্রণালি শেখানো হয় ৷ সেখানেই ভর্তি হওয়ার আর্জি করছিল৷
- তুমি কি বললে?
- কিছুই না, বললুম এত কাশছেন আপনি, ওষুধ না খেয়ে কাশি সারিয়ে ঐ health club এ যোগ দিন, কেমন থাকেন জানাবেন .... তারপর নিশ্চয় আমি নাম লেখাবো৷ এটুকু বলতেই, কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে কেটে পড়লেন৷
ইস আমায় ডাকবেতো, একটু detail এ ব্যাপারটা বুঝতুম।
- নিশ্চয় ,কেমন থাকেন যখন জানাতে আসবেন তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দেবো৷ এখন তাড়াতাড়ি ওঠো , ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে৷
এসে থামলুম ওষুধের দোকানের সামনে৷ কুমার ঢুকেছে মা'য়ের ওষুধ কিনতে, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ৷ দোকানে ভীড় থাকায় বেশ দেরি হচ্ছে৷ দুই ভদ্রলোক দেখি খুব হন্তদন্ত হয়ে বাইক থেকে নামলেন .... একজন অন্যজনকে বলছেন .... এখানে পাবো কি???
দ্বিতীয় জন বললেন, কি জানি???
ওনাদের বিভ্রান্ত দেখে আমি এগিয়ে এসে বললুম, এটা বেশ বড় দোকান .. প্রচুর ষ্টক ... সবরকম ওষুধই এরা রাখে ... জিজ্ঞেস করে দেখুন না .... আপনারা যা খুজছেন পেতেও পারেন।
প্রথম ভদ্রলোক মাথা নেড়ে বললেন, না ওষুধ না, আমরা ২০০০ এর খুচরো খুজছি, কেউ দিচ্ছে না, এরা কি দেবে??

ভদ্রোলোকের সমস্যার কোন সমাধানে বাতলাতে না পেরে , মৌন থাকাই শ্রেয় মনে করলুম৷ কুমারের এতই দেরী হচ্ছে যে বিরক্ত হয়ে পায়চারি শুরু করলুম৷ একটু এগোতে দেখি, পাশের দোকানের একজন তার এক পরিচিতর উদ্দেশ্যে বলছেন, কি দাদা ... আজ চন্নোগর ইস্যান্ড(chandannagar strand) যাননি?! শুনলুন ঝামটা নাচ হচ্চে?? ঝামটা নাচ শব্দ শুনে থতমত খেয়ে গেছি, খেয়াল হলো স্কুল থেকে ফেরার সময় দেখেছিলুম বটে, চন্দননগর ষ্ট্রান্ডে কোন একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, যেখানে ঝুমুর নাচ এবং আরও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, বুঝলুম সেই উদ্দ্যেশেই এই উক্তি।

আর কিছু দেখার এবং শোনার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয়নি৷ কুমার বেরিয়ে এলে, উড়ুক্কুতে চড়ে বাড়ীর ফেরার সময়, পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানের রেডিও য় শুনলুম গান বাজছে, কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ...
সত্যই বটে, দুই ঘন্টায় শহুরে রাস্তায় যা রঙ্গ দেখলুম, তা দুর্লভ বটে৷ তবে সত্যি বলতে আমি কিন্তু সচারাচর চোখ কান খোলাই রাখি, বিনি পয়সায় এমন মন ভালো করা, মন খুলে হাসতে পারার রসদ হাতছাড়া করা যায় নাকি!!!!

(বি. দ্র . এই লেখার সকল চরিত্র একে বারেই কাল্পনিক নয় , এদের সাথে বাস্তবের সম্পূর্ণ মিল আছে ৷)


Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

কন্যের কেশ কথন

ছোটবেলা থেকেই আমার লম্বা ঘন চুল ছিল। খুব ভালো লাগতো আমার। মা মাঝে মধ্যে গজগজ করতো। তার কারণও ছিল অবশ্য। সকালে স্কুলে বেড়োতাম ৮.৩০ টায়। ভোর বেলা উঠে কাজ গুছিয়ে, রান্না করে, আমার টিফিন তৈরি করে তারপর বসতে হত মাকে আমার চুল বাঁধতে। স্কুলের নিয়ম ছিল বড় চুল মানেই দুটো বিনুনি বেঁধে যেতে হবে। প্রায়ই বলত,"উফ তোর চুল বাঁধতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়, দেব ছোট করে এবার।" আমার সাপোর্টে সবসময় ছিল বড়মা। বলত চিন্তা করিস না; তোর মা অমন বলছে, আমি কাটতে দেবই না তোর চুল। আর তাছাড়া আমিও জানতাম মার ওসব কথার কথা। একটু বড় হতে মজা করে যদি বলতাম ভাবছি চুলটা কেটেই দেবো, ওমনি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলতো, "খবরদার, একদম নয়।" সেই থেকে লম্বা ঘন একঢাল চুল। খুব ভালো লাগতো আমার। দেখতে শুনতে কোনদিনই তেমন ছিলাম না। কিন্তু আমার চুল দেখেই নিজেরই মন ভরে যেত। স্কুল থেকে ফিরলে সন্ধ্যে বেলায় মা কালো কার দিয়ে বেড়া বিনুনি বেঁধে দিত। কি যে অদ্ভুত দেখতে লাগতো তারপর কি বলবো। রাত্তির বেলায় চিত হয়ে শুতেই পারতুম না, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যেত, পাশ ফিরে শুতে হতো ।  বাবা মারা যাওয়ার পর, নিয়ম-কানুন মেটার ১৩ দিন পর যখন চুল ...