Skip to main content

একটা ঝগড়ার সাইড এফেক্ট


একটা ঝগড়ার নানা রকম সাইড এফেক্ট আছে । এই যে আমি, আমার মনে হয় মাঝে মাঝে ঝগড়া হওয়া ভালো। খুউউব ভালো। ঝগড়া হলে ভালোবাসা বাড়ে কি কমে সে গপ্পে যাচ্ছি না, তবে হ্যাঁ, যেটা হয় সেটা হলো অনেকগুলো দরকারি জমে থাকা কাজ সারা হয় বটে ।
এই যেমন কাল বিকেল থেকে কুমারের সাথে বোলচাল বন্ধ থাকায় ভালই হলো। ঝগড়ার কারণ যাই হোক না কেন নিয়ম অনুযায়ী সব দোষই কুমারের। কারণ বিয়ের পর পরই কোনো এক ঝামেলার সময় কুমার বলেছিল যা হয়েছে, যা হচ্ছে এবং যা হবে সব কিছুর জন্যই আমিই দায়ী। যদি তোমায় মশা কামরায় সে দায় আমার এবং যদি পশ্চিমবঙ্গে ভূমিকম্প হয় সে দায়ও আমারই।সেই সূত্র অনুযায়ী ঝগড়া যেই করুক, যাই নিয়ে হোক কেন, ফোন চার্জে বসিয়ে সুইচ দিতে ভুলে যাওয়ার মতন হালকা ঝগড়া থেকে ঠিক কথার ভুল মানে করার মতন ভারী ঝগড়া, সব কিছুর জন্য কুমার বাহাদুরই দায়ী। তো দায় যখন তার, রাগ যে আমারই হবে সেটা বলাই বাহুল্য। একে তো ঝগড়ার দায় তার, তারওপর সে যদি রাগ করে, সে কেন রাগ করেছে... এই দুইয়ে মিলে আমার ডবল রাগ এবং তেজ। তা এত রাগ এবং তেজ নিয়ে চুপ চাপ কি বসে থাকা সম্ভব???? তাই শুরু করে দিলাম কাজ। স্কুলের কিছু কাজ নিয়ে এসেছিলাম, সেই কাজ ফটাফট সেরে নিলাম। বেড়িয়ে ফেরার পর থেকে পাশের ঘর টির একেবারে লণ্ডভন্ড অবস্থা, রোজই ভাবি, আজ করবো কাল করবো,ভোর বেলার ঘুম থেকে উঠে তেজ দেখিয়ে ঝপাঝপ ঘর পরিষ্কার করে আলনা, খাট, আলমারি সব গুছিয়ে ফেললুম (পারলে জগৎ সংসারই গুছিয়ে ফেলতুম)। তেজ যত বাড়ে কাজের স্পীডও বাড়ে। মাসকাবাড়ির লিস্তিটাও করাই হচ্ছিল না, যখন যা ফুরোচ্ছে এনে নিয়ে রান্নাবান্না চলছে.... বসে পড়লুম কাগজ পেন নিয়ে, আজকে লিস্টি বানাবই বানাবো, লম্বাআ লিস্টি বানিয়ে ফেললুম। ভাইফোঁটায় অনেক বাসন বেরিয়েছিল, সেগুলো তোলা হচ্ছিল না, সে কাজও সারার আজই প্রকৃষ্ট দিন, হাঁড়ি ডেচকিকে নিজ নিজ স্থানে পাঠিয়ে, একটু জিরোতে বসলাম.... মনে হচ্ছে তেজটা একটু কমলো...
ওদিকে কুমারের হেড অফিস গরম হলে তার এফেক্ট অন্যরকম। সবার আগে তিনি স্বাভাবিক ব্যবহার ছেড়ে বহু বছর বাদে বাড়িতে আসা দুর সম্পর্কের পিসেমশাই এর মতন ব্যবহার আরম্ভ করেন, যিনি কিনা গম্ভীরভাবে কেবলমাত্র সিরিয়াস কথা বলতেই পছন্দ করেন। সে দেখলে মাথাটা আরো ভনভনায়ে যায় আমার। তারপর সে ত্যাগ দেয় তার ফোনটিকে। কাল ঝামেলা হওয়ার পর থেকেই দেখলুম ফোনখানা টেবিলের ওপর বসে কান্নাকাটি করছে, উনি তেজ মুখে গপ্পো বইতে মনোনিবেশ করেছেন। এমন পড়ার ঢং যেন কালকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। রাত্তিরে যার ফোন নিয়ে খুটখাট না করলে ঘুম হয়না , সে দেখি ফোন এবং গল্পের বইয়ের পাট চুকিয়ে 11 টার মধ্যে নিদ্রা গেলেন। রোজই একটা ব্যাপার নিয়ে আমার সাথে যুদ্ধ বাঁধে, আজ দেখি কিছু না বলতেই সেই কাজ সেরে ফেলেছেন, মানে হলো গিয়ে, কুমার রাত্রে দাঁত মেজে শোয়, তাই তার যুক্তি অনুযায়ী, সকালে চা খাওয়ার আগে দাঁত মজার কোনো প্রয়োজন নেই এবং আমার মত হলো সকালে দাঁত না মেজে চা তো দূর, ঢোক গেলাটাও একেবারে "উঃ,ম্যা গো " টাইপের ব্যাপার। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যাকগে, তা আজ দেখি ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে দাঁত মেজে নিয়েছে। এত সুবোধ বালকের মতন আচরণের কারণ অবশ্য পরে শুনলাম, বললো, সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছিল, রাগ বলে আমার সাথে গপ্পো করতে পারছে না আর তেজ বলে ফোন খুটখুট করতে পারছে না, এদিকে ঘর অন্ধকার পর্দা টানা বলে বইও পড়া যাচ্ছে না , তাই কি করবে ভেবে না পেয়ে সে দাঁত মজাটাকেই একমাত্র সময় কাটানোর হেতু হিসেবে বেছে নিয়েছিল।
তবে আমাদের ঝগড়া তো, তার আয়ু খুব বেশি হয় না। একে অপরকে না জ্বালাতে পারলে দিনই কাটতে চায় না। তারওপর এখন দুজনেরই ছুটি, সেট আরেক জ্বালা। হুঁকোমুখো পিসেমশাইয়ের সাথে ঘর করার থেকে অসহ্য বিটকেল বরটাই ভালো আমার। আর তারকাছেও গম্ভীর এবং অসম্ভব ব্যস্ত কেজো বউয়ের থেকে তাকে উৎপাত করে হাড়মাশ এক করা বউই ভালো। তবে একটা ব্যাপার মাথার মধ্যে গিট্টু দিয়ে নিলাম, একসাথে বেশি কাজ জমে গেলেই টুক করে এক খেপ ঝগড়া করে নিতে হবে, প্রেম বাড়ুক বা না বাড়ুক, চটজলদি আমার কাজ গুলোতো সারা হয়ে যাবে। 


Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

সারপ্রাইজের জন্মদিন

বছরের একটা দিন আছে যেটা শুধু আমার, যেদিন সবাই আমার কথা শুনবে , আমার সব আবদার , দাবী মানতে আমি বাধ্য করবো , সবাই ভালো - ভালো কথা বলবে , সেই দিনের আমিই রাজা ৷ সেটা বছরের একটাই দিন ,জন্মদিন ৷ এবছর ৩১ হলো , থুড়ি মা'র কথায় ৩০+ ৷ মা'তো পারলে বয়সটা তিনেই আটকে রাখে ৷ তো যা বলছিলুম , জন্মদিন ... প্রতি বছর আমি আমার জন্মদিন নিয়ে প্রবল উৎসাহিত থাকি, হ্যাঁ নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে বলব এই ৩১ এও আমার জন্মদিন নিয়ে উৎসাহে কোন ঘাটতি নেই আর আগামী যতগুলো বছর বাঁচবো একই উৎসাহপ্রথা চলতে থাকবে এ কথা হলফ করে বলতে পারি ৷ আগষ্ট মাস পড়লেই আমার মনে হতে থাকে ১২ তারিখ আসছে আসছে , মা'কে মনে করানোর দরকার পড়ে না , তিনি তো আমার এক কাঠি ওপরে ৷কিন্তু আমার ভুলো বরটা যাতে কোনভাবেই না ভোলে তার প্রস্তুতি পুরোপুরি নিয়েনি ৷ না বাবা , বর জন্মদিন ভুলে যাবে , তারপর জন্মদিনের সারাদিন মুড অফ করে মান - অভিমান করব, ঐ সব চক্কোরে আমি নেই ৷ তাই সপ্তাখানেক আগে থেকেই কাউন্টডাউন চালাতে থাকি ৷ যদিও ওর জন্য ঐদিন ভোলা খুব একটা সহজ না , একই দিনে বউ আর মা'র জন্মদিন হলে , সেইদিনটি ভোলা একটু চাপের ৷ প্রতি বছর কুমার বাহাদুর ঘোর চ...