Skip to main content

অন্য বিকেল

বাসের মধ্যে ভীড়ে তখন ধাক্কাধাক্কি জোরদার, এদিকে ব্যাগের মধ্যে আমার শ্যামের বাঁশি বেজেই চলেছে। কোনরকমে আমার শ্যামকে থুরি ফোনটাকে ধরতেই কুমার জিগালো,
কোথায় তুমি?
ছুটি হয়ে গেছে, আপাতত গরুরগাড়ি থেকেও ধীরে চলা এক বাসে ভীড়ে চেপ্টে রয়েছি, কোনোরকমে ফোন টা বের করে ধরলাম, কি বলছো?? চটপট বল??
কতদূর পৌঁছেচ??
এই বাগবাজার, কেন??
হসপিটাল মোড়ে নেবে পরো, আমি যাচ্ছি
আমি তালডাঙ্গা অব্দি টিকিট কেটে নিয়েছি তো!!!
উফ, তাতে কি?? যা বলছি করো না, নামো।
আচ্ছা ঠিক আছে।
নেমে পড়লুম।কিছুক্ষণের মধ্যেই কুমার এসে হাজির। বলল, চলো একটু এদিক ওদিক করে বাড়ি ফিরব। উড়ুক্কু চড়ে এদিক ওদিক করতে করতে , আমাদের এই এলাকায় হওয়া প্রথম ফ্লাই ওভারে গিয়ে একটু নামলাম । লোকাল লোক জন একেই আবার বাই পাস বলে। একজনকে জিগেস করেছিলাম , "আচ্ছা দাদা এই রাস্তা দিয়ে গেলেই কি ফ্লাই ওভার টা পাবো??" তিনি খানিক্ষন আমাদের মেপে বললেন, " না, এটা বাইপাসের রাস্তা "। যাই হোক, ওনার বাইপাস এবং আমাদের ফ্লাই ওভারে পৌঁছে, বেশ ভালো লাগছিলো। বেশ ফাঁকা, গাড়ির হর্নের আওয়াজ খুব একটা নেই, মানুষের ভিড় নেই,শান্ত, নির্জন। শুধু মাঝে মাঝে পাস দিয়ে হুস-হাশ করে নানারকম গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। এরম অবস্থায় ছবি তো তুলতেই হবে। নইলেতো এই মুহূর্তটা ফসকে যাবে, অনেকদিন পর তো মনেও থাকবেনা এই দিনটার কথা। এই পড়ন্ত বিকেল, ফাঁকা রাস্তা, হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, সবই আটকে থাকবে ছবিতে। তাই ছবি তোলা চাইই চাই। মন টা হঠাৎ ভীষণ ভীষণ ভালো হয়ে গেল।
একটা দুটো ছবি তুলে একটু এদিক ওদিক দেখছি, হঠাৎ দেখি আমাদের থেকে খানিক দূরে কিছু অল্পবয়সী ছেলেমেয়েও দাঁড়িয়ে, বসে, এমনকি রাস্তায় শুয়েও ছেলফি তুলছে। পাস দিয়ে একটা পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল, এদের এইসব কারনামা দেখে, গাড়ি দাঁড় করিয়ে গটমট করে এসে কটমট করে তাকিয়ে বললো , "সেলফি, সেলফি তোলা হচ্ছে,শুয়ে বসে দাঁড়িয়ে, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।" আমি এমনিই দুর্বল হৃদয়ের মানুষ, এসব দেখে ভাবছি এই বয়সে, ভর বিকেলে, এই বাচ্চা গুলোর সামনে ৩১ বয়সী স্কুল শিক্ষিকা আর তার কলেজ অধ্যাপক বরকেও যদি একইভাবে ঝাড়পিট খেতে হয়,তাহলেতো পেস্টিজের একেবারে দফারফা হয়ে যাবে। কুমার আবার আরেক যন্তর, পুলিশ কিছু বললে, তার সে কথা বলার অধিকার আছে কি নেই সেই বিষয়ে হয়ত তক্কো জুড়বে। তারপর কি হতে পারে, একদম পুরো সিনেমার সিনের মতন দারোগা বাহাদুর আমায় এবং কুমার বাহাদুরকে তাঁর বিশেষ অতিথি বানিয়ে মামারবাড়ি নিয়ে যাবেন এবং বলবেন বাড়ির লোক ডাকুন। বাড়ি থেকে কেইবা যাবে, এক বাবার শরীর খারাপ, আরেক বাবা তো শরীরের মায়া কাটিয়ে বছর দশেক আগেই ভব লীলা সাঙ্গ করেছেন, তাহলে কেইবা যাবে???কিইবা হবে??? হে ভগবান!!!( তিনিও শুনবেন না, বলবে নাস্তিক বরের আর্জি আমার কাছে, হুঁহ আমি নিদ্রা গেলাম)
যাই হোক এই সব কিসুই ঘটলো না। আমার সিনেম্যাটিক ইমাজিনেশন পুরোই মাঠে মারা গেল।অজ্ঞাত কোনো কারণে, ওনারা আমাদের কিছু বললেন না। আমরাও মানে মানে পাস কাটিয়ে উড়ুক্কু উড়িয়ে , মন ভালো করা কিছু মুহূর্তকে মুঠোফোনে বন্দি করে ফিরে এলাম ডেরায়।
ঘ্যানঘ্যানে ,কেজো , বিরক্তিকর হতে পারত যে বিকেলটা , সেট একদম ঝকঝকে হয়ে গেল।

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

কন্যের কেশ কথন

ছোটবেলা থেকেই আমার লম্বা ঘন চুল ছিল। খুব ভালো লাগতো আমার। মা মাঝে মধ্যে গজগজ করতো। তার কারণও ছিল অবশ্য। সকালে স্কুলে বেড়োতাম ৮.৩০ টায়। ভোর বেলা উঠে কাজ গুছিয়ে, রান্না করে, আমার টিফিন তৈরি করে তারপর বসতে হত মাকে আমার চুল বাঁধতে। স্কুলের নিয়ম ছিল বড় চুল মানেই দুটো বিনুনি বেঁধে যেতে হবে। প্রায়ই বলত,"উফ তোর চুল বাঁধতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যায়, দেব ছোট করে এবার।" আমার সাপোর্টে সবসময় ছিল বড়মা। বলত চিন্তা করিস না; তোর মা অমন বলছে, আমি কাটতে দেবই না তোর চুল। আর তাছাড়া আমিও জানতাম মার ওসব কথার কথা। একটু বড় হতে মজা করে যদি বলতাম ভাবছি চুলটা কেটেই দেবো, ওমনি বড়বড় চোখ পাকিয়ে বলতো, "খবরদার, একদম নয়।" সেই থেকে লম্বা ঘন একঢাল চুল। খুব ভালো লাগতো আমার। দেখতে শুনতে কোনদিনই তেমন ছিলাম না। কিন্তু আমার চুল দেখেই নিজেরই মন ভরে যেত। স্কুল থেকে ফিরলে সন্ধ্যে বেলায় মা কালো কার দিয়ে বেড়া বিনুনি বেঁধে দিত। কি যে অদ্ভুত দেখতে লাগতো তারপর কি বলবো। রাত্তির বেলায় চিত হয়ে শুতেই পারতুম না, ঘাড়ে ব্যথা হয়ে যেত, পাশ ফিরে শুতে হতো ।  বাবা মারা যাওয়ার পর, নিয়ম-কানুন মেটার ১৩ দিন পর যখন চুল ...