Skip to main content

মা

শীতকাল মানেই গরম গরম লেপে পা ঢুকিয়ে গল্পের বই পড়া। মার হাতের কড়াইশুটির কচুরী- আলুরদম আর ফুলকপি - নতুন আলু - টমেটো- মটরশুটি দিয়ে গরম গরম খিচুড়ি খেয়ে রসনাতৃপ্তি করা। ট্রাঙ্ক থেকে বের করা ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখানো সোয়েটার,চাদর আর মার গা থেকে পন্ডস ক্রিম মাখানো মা মা গন্ধ। দু হপ্তা হয়ে গেল নানান ঝামেলায় মার কাছে যাওয়াই হচ্ছে না। আজ সকালে থেকেই বড্ড মা পাচ্ছে। ধুত্তোর চুলোয় যাক সব কাজ আজ মার কাছে যাবোই যাবো। ফোন লাগলাম মাকে,
"আজ আমি আসছি।"
গমগমে হাসি হাসি গলা বলে উঠলো,"কখন আসবি?? গরম জামাকাপড় কিছু বয়ে বয়ে আনিস না, আমি সব বের করে, রোদ খাইয়ে রেখেছি। স্কুল থেকে বেরোনোর সময় একটা ফোন করে দিস।"
"আচ্ছা।"
স্কুল থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই দেখলাম রোদ থেকে তুলে নিয়ে আসা গরম গরম বালাপোস আমার দিকে আকুল নয়নে তাকিয়ে আছে। যা যা ঠান্ডায় পরার জামাকাপড় ছিল, সব লাইন দিয়ে সাজানো। কারণ মাতৃ মাপক যন্ত্র অনুসারে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে এবং ঠান্ডা আরো বাড়বে তাই, যাবতীয় গভীর ঠান্ডায় পড়া জামাকাপড় রা ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে সূর্যালোকে গা তাতিয়ে আমার অপেক্ষায় রয়েছে, কখন তাদের পরে আমি ধন্য করবো।
যাইহোক, হাত মুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকছি, তড়িঘড়ি ছুটে এসে বললো, "খবরদার চৌবাচ্চার জলে হাত দিবি না, ঠান্ডা পাথর জল, গিজার চালিয়ে রেখেছি গরম জলে হাত মুখ ধো।"
"আরে মা কিচ্চু হবে না, চান থোড়াই করবো হাত মুখ ধবো, গরম জল লাগবে না।"
"আবার তক্কো করছিস, বলছিনা ঠান্ডা লেগে যাবে৷"
"আচ্ছা বাবা আচ্ছা।"
হঠাৎ চোখ গেলো, কমোডের ওপর নতুন একটা প্লাস্টিক কভার৷ "মা, এই কমোডের ওপর নতুন কভার কবে লাগালে?? কবে লাগলো মিস্ত্রি??"
"হুঁহ তোর মাকে ভাবিস কি, আজই কিনে এনেছি, আমিই লাগিয়েছি। মিস্ত্রি লাগেনি,আগের টা ভেঙে গেছিলো।"
"আমায় বলতে পারতে, আমি এসে করে দিতাম৷"
"না না,যা ঠান্ডা, তুই যখন আসবি বললি সকালে, গিয়ে নিয়ে আসলাম। আমার যা হয় হয়, আমার মেয়ের কোনো কষ্ট হতেই দেব না।"
"কমোডের ঢাকনার সাথে আমার কষ্টের কি সম্পর্ক???"
"না না ওইযে ওটা ঠান্ডা না, প্লাস্টিক রিং টা না থাকলে, ঠান্ডা লেগে যাবে তো তোর।"
বাথরুম পর্ব মিটলো। প্রচুর খিদে পেয়েছে। টেবিলে বসতেই চলে এলো গরম গরম খিচুড়ি, পাঁপড় ভাজা, ডিম ভাজা, বেগুন ভাজা আর ধনেপাতার চাটনি। পেট পুরে খেয়ে উঠে গরম গরম বালাপোসের মধ্যে নিজেকে চালান করে, কোলবালিশ জড়িয়ে, কানে হেডফোন গুঁজে,গল্পের বইটা খুলে পড়তে পড়তে আর ভাপিয়ে বিটনুন মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে রাখা আমলকি খেতে খেতে মনে হলো একেই বোধহয় স্বর্গীয় সুখ বলে।
এত্ত আরামে ঘুম আসবে আসবে করছে, দেখি নাকের মধ্যে মা মা গন্ধ আসছে। তাকিয়ে দেখি পাশেই সোফায় বসে বসে মা কড়াইশুটি ছাড়াচ্ছে। বললুম, "আমার কাছে একটু শোও৷"
"না, এখন কড়াইশুটি ছাড়াবো, পুর করে রাখবো। রাত্তিরে কচুরী আর আলুরদম করবো।"
"উফ মা , দুপুরে এত খেয়েছি, রাত্রে আর পারবো না। এখনো হজমই হলো না যে খেয়েছি তুমি আবার রাত্তিরের প্রস্তুতি শুরু করে দিলে??? এসো না, একটু গপ্পো করি।"
"আরে রাত্তিরের ঢের দেরি, আমি কাজ করতে করতেই গল্প করছি তোর সাথে।"
"এত ক্যালরি একদিনে খাওয়া ঠিক না মা।"
"ক্যালোরি??? কিসে ক্যালোরি??? কড়াইশুটির কচুরি তে কোথায় ক্যালরি???? শীতে ঠান্ডায় কড়াইশুটি খাওয়া খুব ভালো শরীরের জন্য। আর আলুর দমের আলু সেদ্ধ করে জল ফেলে দেবো ব্যাস, কিচ্ছু হবে না।"
"আচ্ছা আর তেলে যে ভাজবে???"
"গরম জলে মাখবো ময়দা, একটুও তেল টানবে না। তুই ওসব ক্যালরি ফেলোরই নিয়ে ভাবিস না।"
"উফ মা তুমি ধন্য" 
সত্যি মা, তুমি ছাড়া আর কেইবা এইরকম ভাবে অদ্ভুত যুক্তি দিয়ে প্রিয় খাবারটা খাওয়াবে। তুমি ছাড়া কেইবা না বলতেই বুঝে যাবে সব ইচ্ছেগুলো। তুমি ছাড়া কেইবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুপারম্যানের মত সব ভালোলাগা গুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে ফেলবে, তুমি ছাড়া আর কেইবা চোখে না পড়া বিষয়গুলোও অসুবিধাগুলো ঘুছিয়ে দেবে, তুমি ছাড়া আর কে এই ভাবে শরীর-মনের আরাম দেবে। তোমার মতন যে সত্যি কেউ হয়না মা, হতেই পারে না।

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

ডুয়ার্স সফরনামা: প্রথম দিনের কাহন

গতবছর উড়িষ্যা ট্রিপে বসেই ঠিক হয়েছিল এবছরের ডেস্টিনেশন ডুয়ার্স। প্রস্তাবটা অনির্বানই দিয়েছিলো। চল এবার ডুয়ার্স যাই, বক্সা-লেপচাখা-জয়ন্তী আর ফেরার পথে কোনো একটা জঙ্গল। প্রস্তুতি শুরু হলো সেই মতন। প্রতিবারই যা হয় - কটা টিকিট কাটা হবে সেই নিয়ে টানাপোড়েন। এই চার মাস আগে টিকিট কাটার গপ্পোটা বড্ড ঝামেলার। তাই মোটামুটি গড়ে হিসেব করে ৯ টা টিকিট কাটা হলো। উত্তরবঙ্গে যাওয়া পাকা ।টিকিট কাটার ঝঞ্ঝাট নিয়ে আমি গপ্পো ফেঁদে বসলাম। (দ্রঃ  টিকিটপুরাণ ) ফেরার টিকিটের দিনই হলো ঝামেলা। কাঞ্চনকন্যায় ওয়েটিং হয়ে গেলো। কুমার কত্তার সব কাজ একদম যথাযথ হওয়া চাই, তাই কনফার্ম হয়ে যাবে এই আশা রেখেও পরের দিনে কাঞ্চনজঙ্ঘায় কনফার্ম টিকিট কেটে রাখলো। মাসবদলের সাথে সাথে আমাদের যাওয়ার সদস্য সংখ্যাও পাল্টাতে থাকে। কখনো ৯ থেকে ৭ কখনো বা ৫ আবার কখনো ৬। দীপঙ্কর দা মানে যিনি আমাদের ডুয়ার্সের দিনযাপনের ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ন দায়িত্বে ছিলেন তারও মাথা খেতে থাকি। কখনও বলি ৯ জন যাচ্ছি না ৭ জন, কখনও বলি  ৫ জন কনফার্মই কনফার্ম; আবার যাওয়ার একমাস আগে বলি, একটু ম্যানেজ করে  ৮ জনের ব্যবস্থা করে দাও। কিভাবে যে উনি সবটা অ্যা...