ঘটনাটা কিছুদিন আগের।
ঠান্ডাটা এত জম্পেশ পড়েছে যে চটি ছাড়া মেঝেতে পা ঠেকালেই পা টু ব্রহ্মতালু ঠকঠকিয়ে যাচ্ছে। দিদি আসে খুব সকাল সকাল।কদিন ধরেই ভাবছি, ওর জন্য একটা ঘরে পড়ার চটি নিয়ে আসবো, এই ঠান্ডায় পায়ের নিচে পাপোশ রেখে রান্না করে। সেদিন আবার জল পরে সেই পাপোশ গেছে ভিজে, আমি আমার চটিটা দিয়ে বললুম পর তো, এটা পরে কাজ করো, বাড়ি যাবার সময় দিয়ে যেও। দোনা মনো করে গলিয়ে ফেললো,কিন্তু গলালেই কি হলো?? আমার চটি পরে সেতো ছপাত ছপাত করে। জিগালুম,
তোমার পায়ের মাপ কতো গো দিদি??
৬ গো বৌদি
ওই জন্যই, নয় কি আর ছয়ে হয়!!!
হ্যাঁ, তোমারটা পরে তো আমি হাঁটতেই পারছি না তো।
কি আর করবে, বেশি হাঁটাহাঁটি করো না, করলেও সাবধানে করো।
মনে মনে ঠিক করলুম, আজ এর একটা হস্তি নস্তি করেই ছাড়বো।
আমাদের এখান থেকে স্কুল অব্দি যাওয়ার ডিরেক্ট অটো পাইনা। মাঝখানে একটা স্টপেজে নেমে আরেকটা অটোয় যেতে হয়। তা ওই মাঝের স্টপেজে নামতেই সামনেই একটা জুতোর দোকান। ঢুকলাম ভেতরে, দোকানটা সবে খুলছে তখন। আমায় ঢুকতে দেখে দোকানে মালিক আরাধ্য দেবতা কে ধুপ ঘোরাতে ঘোড়াতেই দাঁত চিপে গম্ভীর গলায় বললেন, "জুতোটা বাইরে খুলে আশা হোক।"
ওনার ওই imperetive সেনটেন্স র passive voice ওলা গর্জন শুনে জুতোর দোকানে জুতো খুলে ঢুকলাম। আমার পিছনেই এক ভদ্রমহিলা ঢুকেছিলেন ওনার উদ্দেশ্যেও ভদ্রলোক একই উক্তি পুনরায় উক্ত করলেন।
ওনার ওই imperetive সেনটেন্স র passive voice ওলা গর্জন শুনে জুতোর দোকানে জুতো খুলে ঢুকলাম। আমার পিছনেই এক ভদ্রমহিলা ঢুকেছিলেন ওনার উদ্দেশ্যেও ভদ্রলোক একই উক্তি পুনরায় উক্ত করলেন।
একটা ৬ নম্বরের হাওয়াই চটি কিনতে ঢুকে প্রথম ৬ মিনিট আমার ঠিক কেমন হাওয়াই চটি লাগবে তাই বিবৃতেই কেটে গেল। এই যেমন কেমন হাওয়াই চটি চাইছেন, ছোটদের নাকি বড়দের, কার্টুন আঁকা নাকি সিম্পল, ব্র্যান্ডেড নাকি এমনি পাতি, গাঢ় রং নাকি হালকা। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে আমি বললাম, দাদা আপনার যেমন পছন্দ দিন ৬ নম্বর হলেই হলো। উনি হেলে দুলে দেখে শুনে দিতে দিতে দেখলাম আমার পরে আসা ভদ্রমহিলা বিল হাতে বেড়িয়ে গেলেন। যাইহোক শেষমেশ উনি একটা চটি এনে আমায় উদ্ধার করলেন, আমিও দাম চুকিয়ে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে পড়লাম।
স্কুলে যাবো, এমনিই দেরী হয়ে গেছে, বেরিয়ে ঝোপ করে জুতোটা গলিয়েই অটোয় উঠে পরবো এই তাল করেছি, ও বাবা এ কি!!! জুতোয় তো পা ঢুকছেই না। কি হলো কেস টা?? অন্য কারো জুতো পড়ছি নাকি, নাহ এত আমারি জুতো , সেম ডিজাইন। তাহলে কি ৫-১০ মিনিটে আমার পায়ের অকালবৃদ্ধি ঘটলো নাকি দোকানের ভেতরে ৬ নম্বর চটির এত গপ্পো শুনে আমার ৯ নম্বর চটি শোকে দুঃখে নিজেকে ৬ নম্বরে কনভার্ট করে ফেলল। যাকগে আসল গপ্পো টা বুঝতে দেরি হলো না, আমার পরে যে ভদ্রমহিলা ঢুকেছিলেন তার জুতোটাও হবি তো হ হুবহু একদম আমার জুতোর ডিজাইনের। তিনি আমার নয় টি ভুল করে পরে তার ছয় টি আমার জন্য রেখে গেছেন। উফফ জীবন একেবারে আমার নয়ছয় হয়ে গেলো। কি আর করি, আসে পাশের দোকানের উঁকি মারলাম যদি চোখে পড়ে ওনাকে, নাঃ নেই। কি করি কি করি আমার যা পায়ের মাপ তাতে এই দোকানে আমার জুতো পাবো না, স্কুলেরও দেরী হয়ে যাচ্ছে। শেষমেশ ওনার ফেলে যাওয়া ছয় নম্বরেকেই খড়মের মতন করে পরে ছুটলাম স্কুলে।
সারাদিন সেকি অস্বস্তি উফ। স্কুল থেকে ফেরার সময় বাসে উঠে ভাবলাম ফেরাই পথেই নতুন একটা জুতো কিনে ফিরি, নইলে খুব মুশকিল। জানলার ধারে বসে হাওয়া খেতে খেতে ভাবছি বেশ এরম হতো, যে দোকান থেকে আমি জুতো কিনি সেখানে গেলুম। নতুন জুতো না কিনে তো উপায় নেই। মনে মনে গজ গজ করতে করতে সেই ভদ্রমহিলা এরম কিম্ভুতেরে কাজ কিভাবে করলেন ভাবতে ভাবতে জুতো দেখব, ওমনি হঠাৎ দেখব পাশে সেই মহিলা। উনিও বেজার মুখ করে জুতো দেখছেন সম্ভবত আমায় মনে মনে গাল ও দিচ্ছেন নিশ্চয়ই। আমি ওনাকে দেখেই হাতে চাঁদ পাওয়ার মতন আনন্দে আপ্লুত হয়ে খপ করে ওনার হাতে ধরে বলবো, "ইউরেকা" থুরি আরে আপনিও হেথা"!! তারপর সব বিবৃতি বুঝিয়ে বলায় উনিও স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলবেন এবং জুতোর দোকানে দুই খদ্দের কোনো জুতো না কিনে নিজেদের মধ্যে জুতো অদলা বদলি ঘটিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে এরম ঐতিহাসিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকবেন জুতোর দোকানের সব কর্মী ভাই-দাদারা।
খ্যাচ করে বাসের ব্রেক চিপতেই আমার উইশফুল থিঙ্কিং এর জালটা কুচ করে কেটে গেলো। বলাই বাহুল্য যেমন ভাবছিলাম তেমন কিছুই হলো না। জুতোর দোকানে ঢুকে একটা দারুন জুতো পছন্দ হতেই সারাদিনের খিঁচিয়ে থাকা মেজাজ একদম মিষ্টি হয়ে গেলো।
দিদি ডাবল পাদুকা পেল, একটা নতুন চটি আর আমার বদলে যাওয়া ৬ নম্বরও ওরই হলো আর জুতোর দোকানদারও দুটো "হঠাৎ খদ্দের" পেয়ে গেলো, আমি আর সেই উনি। ওনার জুতোটাও ওই দোকান থেকেই কেনা ছিল সম্ভবত,সেম ব্র্যান্ড - সেম ডিজাইন, শুধু নম্বর আলাদা এই যা। আমি যেমন বদলে যাওয়া ছয়কে ছাড়তে নয় বাগলুম তেমনি ওনাকেও তো আমার নয় কে ছেড়ে নিজের ছয়কে বাগাতে হবে। তবে যাই বলি এই নয়-ছয় কাণ্ডে আখেরে বেশ লাভই হল, হঠাত করে একটা নতুন জুতো লাভ হয়ে গেল।
Comments
Post a Comment