বড় এক অদ্ভুত লোককে বিয়ে করেছি আমি। যেমন নিজে সে অদ্ভুত, তেমনই অদ্ভুত তার জীবনদর্শন। দিন কয়েক আগে কোনো এক কারণে আমার ভীষণই হৃদ-পীড়ন হওয়ায় তিনি আমায় বোঝাচ্ছিলেন, যে কারণে আমি পীড়িত হচ্ছি, সেটা নাকি আসলে পীড়িত হওয়ার মতন কোনো বিষয়ই নয়। সাধারণত মনে মেঘ জমলে, যে কারণে মেঘ জমেছে, সেই কারণটিকে মনের সবচেয়ে কাছের মানুষটি মেঘ জমার যথার্থ কারণ মেনে সম্মতি প্রকাশ করলে , মেঘ আরো ভালো ভাবে জমে, প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং শেষমেশ মেঘ কেটে রোদ্দুর ওঠে। মনটায় বেশ আরাম লাগে কিন্তু তারপর। কিন্তু কুমারের অসম্মতির হাওয়া পেয়ে আমার মনের মেঘ না জমলো না কাটলো, একদম তালগোল পাকিয়ে দরকাঁচা হয়ে গেল।
কুমার বাহাদুরের মতানুসারে,যে কারনে আমার মাঝেমধ্যেই নিম্নচাপ হয়ে থাকে সেই কারণটাই নাকি সবচেয়ে আনন্দ পাওয়ার বিষয়। মাঝে মাঝে সত্যি মনে হয় লোকটার মুন্ডুটা খুলে দেখি, ভেতরে কি আছে,কিভাবে কাজ করে ওর পুরো সিস্টেম। কিন্তু তা আর হয় কি করে, সাত টা নয় পাঁচটা নয় একটা মোটে বর বলে কথা, মুন্ডু খোলার পর যদি আটকানো না যায়, হবে কি আমার!! কাল ওই দরকাঁচা মন নিয়ে যখন মুখ হাঁড়ি করে বসে আছি, কুমার পিতৃস্নেহে শুধলো,
"কি গো কি হয়েছে??"
"কিছু না।"
"কিছু না।"
এটি স্ত্রী জাতির অবশ্যম্ভাবী এবং অতি ভয়ঙ্কর উত্তর। আক্ষরিক অর্থ বুঝে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করলে, ধুপ-ধাপ করে জিনিস ফেলা--ঠক করে খাবার থালা নামান-- ধপাস করে দরজা বন্ধ থেকে বাক্যালাপ এবং হেঁসেল বন্ধ স্বরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
যদিও কুমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ধার ধারেন না এবং কোনোরকম মাথা ব্যথায় থাকেন না। কারণ আমাদের ক্ষেত্রে এরম কোনো পরিস্থিতি তৈরিই হয় না। উনি এক অসীম ক্ষমতার অধিকারী। ওনার যদি আমায় দেখে মনে হয় কিছু একটা হয়েছে, সেটা আমি বলতে চাই বা না চাই উনি সেটা জেনেই ছাড়েন। এমনকি যদি কিছু সত্যিই নাও হয় , যতক্ষণ না আমি ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে বলবো ঠিক আছে আমি তাহলে বানিয়ে ভেবে বলি কি হয়েছে, ততক্ষণ অব্দি তিনি ক্ষান্ত হন না।
যদিও কুমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ধার ধারেন না এবং কোনোরকম মাথা ব্যথায় থাকেন না। কারণ আমাদের ক্ষেত্রে এরম কোনো পরিস্থিতি তৈরিই হয় না। উনি এক অসীম ক্ষমতার অধিকারী। ওনার যদি আমায় দেখে মনে হয় কিছু একটা হয়েছে, সেটা আমি বলতে চাই বা না চাই উনি সেটা জেনেই ছাড়েন। এমনকি যদি কিছু সত্যিই নাও হয় , যতক্ষণ না আমি ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে বলবো ঠিক আছে আমি তাহলে বানিয়ে ভেবে বলি কি হয়েছে, ততক্ষণ অব্দি তিনি ক্ষান্ত হন না।
তো যা বলছিলাম, কালও একই রকম ভাবে আমার হৃদ-পীড়নেরর বৃত্তান্ত আমার পেট থেকে টেনে বের করার পর কুমার কইলেন,
"এই জন্য তুমি মনখারাপ করছো??"
"করবো না???"
"না, এতে মনখারাপ করার মতন কিছু নেই।"
"তাই ??? তুমি অনেস্টলি তোমার রেসপনসিবিলিটি পুরোপুরি পালন করছো, তবুও কেউ তোমায় ক্রিটিসাইজ করছে, তোমার নামে মিথ্যে কথা বলছে, তার কথা শুনে অন্যরাও হয়তো আমায় ভুল বুঝছে। তুমি নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছ, সব ভালো হোক, সবটা ঠিক হোক , তবু সেটা হচ্ছে না, তুমি যেটা চাইছ সেটা পাচ্ছ না। তোমার খারাপ লাগবে না?"
"না। একেবারেই না।"
"তোমার সাথে কেউ এরম করলে তোমার খারাপ লাগতো না?? রাগ, বিরক্তি কোনোটাই হতো না???"
"আমি যা করছি সেটা যদি আমার কাছে ঠিক হয়, আর কে কি বলছে, কি ভাবছে কিছু যায় আসে না।"
"তাই বুঝি??? তোমার মনে হতো না আমি যা করছি সেটা ঠিক কিন্তু বিনিময়ে যেটা পাচ্ছি সেটা কি আমি ডিসার্ভ করি???"
"একদমই না। তুমি যদি তোমার কাছে ঠিক হও। তাহলে তোমাকে যে বা যারা ভুল বলছে, সে বা তারা ভুল। তাহলে ভুল লোকের কথায় কষ্ট কিসের। ঠিক লোকের সংখ্যাই তো কম, তাই বেশির ভাগ লোকই তাদের ভুল বলে। তাই এই সব লোকেরা তোমার ভুল বলা মানে, তুমি ঠিক। এতে তোমার ভালো লাগাই উচিত নয় কি??"
"কি জানি , আমি তো তোমার মতন করে ভাবতেই পারিনা"
"শোনো গ্যালিলিও যখন বলেছিলো পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে, তাকে কিন্তু সবাই তখন ভুলই বলেছিলো। তাতে কি সত্যি টা মিথ্যে হয়ে গেছিলো??"
"উফফ তুমি না সত্যি,কিসের সাথে কিসের তুলনা।"
"তুমি কি বুঝলে যেটা বোঝাতে চাইছি???"
"হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, বুঝলুম বুঝলুম."
এরম বোঝানোর লোক থাকলে, না বুঝে আর যাই কোথায়। তবে বোঝাটা বেশিদিন থাকে না। কিছুদিন গেলেই আবার একই ভাবে আমি কারো না কারো কথায় ব্যথিত হই, এবং কুমার একই কথা নতুন কিছু উদাহরণ যোগে আমায় ঠান্ডা করে। মাঝে মাঝে কুমারকে বলিও, আমায় একটু তোমার মতন করে দাও না, তাহলে আমার তোমার দুজনেই রক্ষে পাই। ভাগ্যিস এই কারো কথায় কিছু মনে না করা, কেউ খারাপ কথা বললেও খারাপ না লাগা ,রাগ না হওয়া ,কষ্ট না পাওয়া, রাত দুপুরে গ্যালিলিওর উদাহরণ দিয়ে বউয়ের সমস্যার সমাধান করা অদ্ভুত কুমার বাহাদুরকে বিয়ে করেছিলাম , নইলে আমার এই অতি স্পর্শকাতর মনটার যে কি হতো কে জানে।
Comments
Post a Comment