Skip to main content

আবদার

যত বয়স বাড়ে বাড়ির খুদে সদস্যরা হয়ে যায় অভিভাবক আর অভিভাবকরা হয়ে যায় কচি-কাঁচা।
আবদার, জেদ, মান-অভিমান সব কিছুই সামলাতে হয় অনেকটা ধৈর্য্য, যত্নে,ভালোবাসায়। আমার দুই কন্যা, বড় কন্যা আমার শাশুড়ি মা ছোট কন্যা আমার মা। বড় কন্যা আজ সকালে উঠেই ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
আমার রোজ রোজ ভাত তরকারি খেতে ভালো লাগে না। আজ ভাত খাবো না।
শুধলুম, আচ্ছা ঠিক আছে, কি খাবে বলো??
আর যা খাই ওই তরকারি, ডাল, তেঁতো ওই সব একদম খাবো না, দরকার হলে হরিমটর খাবো।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, ওই সব কিচ্ছু খেতে হবে না, হরিমটরও খেতে হবে না। রান্নারদিদি আজ ছুটি নিয়েছে, আমিও আজ স্কুল যাবো না, তুমি যা খেতে চাইবে, তাই খাওয়াবো। কি ইচ্ছে করছে বলো??
অনেক ভেবে চোখ গোল গোল করে আদুরে গলায় বললো,
ফ্রয়েড রাইস আর আলুর দম।
আবদার মেটাতে কোমর বেঁধে লেগে পড়লুম। এ বাড়িতে বড় কন্যা ছাড়াও আরো দুই ছেলে আছে, জেঠু এবং বাবা, এদের একজন ৮০ ঊর্ধ্ব এবং আরেকজন ৭০ ঊর্ধ্ব। প্রত্যেকেই মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ এবং আরো নানান আভরণে আভরিত। তাই স্বাদের কোটা পূর্ণ করতে গিয়ে শরীর যাতে না চটে বসে , সে দিকে সম্পূর্ণ খেয়াল রেখে বানিয়ে ফেললুম হাল্কা ফ্রয়েড রাইস, আলুর দম, দই মাছ আর বাড়ির গাছের কাঁচা আমের টক।
মা আজকাল সব কিছুই খুব ভুলে যায়, সকালে আবদার কথাও ভুলেই গেছিলো। খেতে বসে শুকনো মুখে জিগেস করলো আজ কি তরকারি হয়েছে?? উত্তরে আজ স্পেশাল মেনু মনে করিয়ে দিতেই বাচ্চাদের মতন চোখ মুখ খুশি তে ভরে গেলো। সামনে বসিয়ে তৃপ্তি করে খেতে দেখে আমার মনটা টইটুম্বুর হয়ে গেল। এই ছোট ছোট ভালোলাগা গুলো, টুকরো টুকরো মুহূর্ত গুলোই তো জীবন টাকে মিষ্টি করে দেয়। সব সমস্যা,কষ্ট ভুলে ভালো থাকতে শেখায়।

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

সারপ্রাইজের জন্মদিন

বছরের একটা দিন আছে যেটা শুধু আমার, যেদিন সবাই আমার কথা শুনবে , আমার সব আবদার , দাবী মানতে আমি বাধ্য করবো , সবাই ভালো - ভালো কথা বলবে , সেই দিনের আমিই রাজা ৷ সেটা বছরের একটাই দিন ,জন্মদিন ৷ এবছর ৩১ হলো , থুড়ি মা'র কথায় ৩০+ ৷ মা'তো পারলে বয়সটা তিনেই আটকে রাখে ৷ তো যা বলছিলুম , জন্মদিন ... প্রতি বছর আমি আমার জন্মদিন নিয়ে প্রবল উৎসাহিত থাকি, হ্যাঁ নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে বলব এই ৩১ এও আমার জন্মদিন নিয়ে উৎসাহে কোন ঘাটতি নেই আর আগামী যতগুলো বছর বাঁচবো একই উৎসাহপ্রথা চলতে থাকবে এ কথা হলফ করে বলতে পারি ৷ আগষ্ট মাস পড়লেই আমার মনে হতে থাকে ১২ তারিখ আসছে আসছে , মা'কে মনে করানোর দরকার পড়ে না , তিনি তো আমার এক কাঠি ওপরে ৷কিন্তু আমার ভুলো বরটা যাতে কোনভাবেই না ভোলে তার প্রস্তুতি পুরোপুরি নিয়েনি ৷ না বাবা , বর জন্মদিন ভুলে যাবে , তারপর জন্মদিনের সারাদিন মুড অফ করে মান - অভিমান করব, ঐ সব চক্কোরে আমি নেই ৷ তাই সপ্তাখানেক আগে থেকেই কাউন্টডাউন চালাতে থাকি ৷ যদিও ওর জন্য ঐদিন ভোলা খুব একটা সহজ না , একই দিনে বউ আর মা'র জন্মদিন হলে , সেইদিনটি ভোলা একটু চাপের ৷ প্রতি বছর কুমার বাহাদুর ঘোর চ...