Skip to main content

কিম্ভুতে কুমার

মানুষ সাধারণত দুই প্রকার হয় বলেই আমার ধারণা--সোজা এবং ব্যাঁকা। কিন্তু এই দুরকম গুনই যদি একই মানুষের মধ্যে যদি বিরাজ করে তাহলে ব্যাপার টা কিরম হতে পারে?? যে ভদ্রলোকটির সাথে গত চার বছর ঘর করছি তিনি এই দুই গুণের কম্বিনেশনে তৈরি। তাকে দেখতে ভীষণ সোজা কিন্তু আদতে তিনি নিজের ব্যাপারে বিশেষত নিজের শরীরের যে কোনো রকম সমস্যার ব্যাপারে, কতখানি ব্যাঁকা তা ওনার সাথে ২৪ ঘন্টা একই ছাদের তলায় না কাটালে বোঝা দায়।
দুদিন আগে তেনার ঘাড়ে ফিক লেগেছিল। প্রথমত তাঁর কি হয় না হয় তিনি নিজেই বুঝে উঠতে পারেন না। নানা রকম জেরার পর আমি বুঝে উঠতে সক্ষম হই যে তাঁর এক্সাক্টলি কি হয়েছে। যাইহোক আমি ওপরের কাজকম্ম মিটিয়ে নেমে দেখি ঘরে অদ্ভুত ভাবে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। জিগালুম,
"কি হলো?"
বলল, "জানিনা, হঠাৎ আমার ঘাড়ে পিঠে ব্যথা করছে খুব।"
"পরে গেছিলে নাকি??"
"না না!!"
"মাসল পেন মনে হচ্ছে??"
"না না!!"
"তাহলে ?"
"ওসব জানিনা, ব্যথা করছে একটু বুঝছি"
"কি মুশকিল, কি থেকে ব্যথা হচ্ছে সেটা তো বুঝতে হবে??"
"সেসব জানিনা, শুধু ব্যথা হচ্ছে খুব।"
"আচ্ছা সোজা হয়ে দাঁড়ালে বা বসলে ব্যথা হচ্ছে, নাকি ঘাড় ঘোরাতে গেলে বা পার্টিকুলার কোনো একটা দিকে মুভ করতে গেলে ব্যথা লাগছে??"
"ওরে বাবা রে, এই ঘাড় ঘোরাতে গেলেই লাগছে।"
বুঝলাম যে ফিক লেগেছে এবং এও বুঝলাম যে আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়াও শুরু হলো। এই ভদ্রলোককে ডাক্তার দেখান, ওষুধ খাওয়ান এবং তার শরীর সম্বন্ধীয় ব্যাপারে যত্ন নিতে গেলে যে পরিমান এনার্জি এনার ওপর অম্ল-মধুর বাণী সহযোগে বর্ষণ করতে হয় তা আমি ব্যাতিত কারো পক্ষেই জানা এবং বোঝা সম্ভব নয় । কারণ তার এই রূপ বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কারো সামনেই প্রকাশ পায় না এবং তারা ভাবতেও পারে না নিপাট ভালোমানুষটা কতটা জর্জরিত করতে পারে। প্রতিবার যে কোনো শরীর খারাপ বা কোনোরকম শারীরিক অসুবিধা হলেই তার কিছু মহান উক্তি বাঁধাধরা থাকে।এই যেমন "চিন্তা করো না, কিচ্ছু হয়নি" , "কাউকে কিছু বলোনি তো??", " না না ডাক্তার দেখানোর কোনো দরকার নেই ", "আরে ধুর কি এমন হয়েছে ওষুধ খেতে হবে" , " এত্ত বড় ওষুধ, অসম্ভব আমি গিলতে পারবো না" , "কি বাজে গন্ধ ওষুধটার আমি খাবোই না" , "তেঁতো কেন মিষ্টি ওষুধ দাও " ইত্যাদি ইত্যাদি। তেনাকে সুস্থ করতে বাধ্য হয়ে ঠাকুমা , দিদিমা দের ঘরোয়া টোটকা অবলম্বন করতে হয় । প্রথম প্রথম তো তাতেও আবার বিজ্ঞানের অধ্যাপকের ভরসা ছিল না। ঠান্ডা লাগলে হয়তো হাতে পায়ে জোয়ান তেল মালিশ করে দিচ্ছি,বলত ধুর এসবে কিছু হয় না। আসতে আসতে পসিটিভ ফলাফল পাওয়ার পর এখন পথে এসেছে। যাকগে, তো ফিক লেগেছে বুঝে বললুম,
"শোনো সেঁক নিতে হবে, আর ফিক ব্যথার খুব ভালো একটা ওষুধ আছে সেটা খেলেই কমে যাবে।"
"না না ওষুধের কোনো দরকার নেই, আর এই গরমে গরম সেঁক, পাগল হলে নাকি তুমি??"
"ওষুধ খাও বা না খাও সেঁকটা নিতেই হবে। সেঁক দিয়ে, ওই স্প্রে টা দিয়ে দিলে কমে যাবে ব্যথা দেখ,আরাম হবে।"
"না না না একদম না, প্রচন্ড গরম ..আপনাআপনি সেঁক হচ্ছে ,আর ঐ স্প্রে টা দিলে খুব জ্বালা করে। একদম না, অসম্ভব।"
অসম্ভব কে কিভাবে সম্ভব করতে হয় তা আমার জানা আছে। যা বলার বলে যায়, তাতে পাত্তা না দিয়ে নিজের যা করার সেটা করে যাওয়ার বদগুনটা ভালোভাবে রপ্ত করে নিয়েছি, আর তাতেও কাজ না হলে , "ঠিক আছে বাবাকে বলছি তবে!!!" এই বাক্যটি মোক্ষম বানের কাজ করে । দু-তিন বার সেঁক দিয়ে, ব্যথার স্প্রে দিতে পরের দিন অনেকটাই ঠিক এবং ফিট। ফলত নখরার লেভেলটা আরো ওপরে।
"তুমি কি ভালো গো(এটা তেল)। একদিনেই ঠিক করে দিলে। আজ আর কিছুই করতে হবে না। অনেএ একটাই ঠিক, বাকি টা এমনি সেরে যাবে।"
"দেখো ওরম মনে হচ্ছে, ফিক ব্যথা একদিনে যায় না। আজকে আর কয়েকবার সেঁক নাও, স্প্রে টা দি নইলে কাল আবার বাড়বে।"
"দয়া করে তুমি আমার ওপরে আজ আবার ওই অত্যাচারটা করো না। আমি পারছি না, ঘাড়ে ব্যথা একদম ঠিক হয়ে গেছে, বিশ্বাস করো"
"শোনো... "
"না না না, এই গরমে আমি গরম সেঁক নিতে পারবো না। একদম না।"
"আমিও যুদ্ধের ইতি টেনে বললুম, ঠিক আছে। কারণ এর পর কি হবে তা তো আমার জানা, আর সেটা জানা সত্ত্বেও এই লোকের ওপর বিরক্ত হয়েও যে কোনো লাভই নেই, তাও জানা।"
আজ সকালে চোখ মুখ কুঁচকে এপাশ ওপাশ করছে বিছানায়। বুঝতেই পেরেছি, কিছু বলিনি। খানিক্ষন বাপরে, উফফ করার পরও আমার কোনো বাক্যবাণ ধেয়ে এলো না দেখে নিজেই হাঁক পারলো,
"খুব ব্যথা করছে, সেঁক দেবে??"
এই কিম্ভুতে কুমারকে নিয়ে আমি কি করি। ছেড়ে ছুড়ে চলে যে যাবো, দ্বিতীয়ইপক্ষ কি থোড়াই এত ঝামেলা নেবে??? সেই আমাকেই আসতে হবে আবার তাকে ট্রেনিং দিতে। সে আরেক জ্বলন। তখন বরকে সামলাবো নাকি তার দ্বিতীয়পক্ষকে সামলাবো !!! তার চেয়ে এই ভালো, তেনার অদ্ভুতুড়ু কিম্ভুতেপনার সাথে আমার বাক্যিসেঁক এবং বাক্যিবাণ চলতে থাকুক মিলেমিশে- ভালোবেসে।


Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

সারপ্রাইজের জন্মদিন

বছরের একটা দিন আছে যেটা শুধু আমার, যেদিন সবাই আমার কথা শুনবে , আমার সব আবদার , দাবী মানতে আমি বাধ্য করবো , সবাই ভালো - ভালো কথা বলবে , সেই দিনের আমিই রাজা ৷ সেটা বছরের একটাই দিন ,জন্মদিন ৷ এবছর ৩১ হলো , থুড়ি মা'র কথায় ৩০+ ৷ মা'তো পারলে বয়সটা তিনেই আটকে রাখে ৷ তো যা বলছিলুম , জন্মদিন ... প্রতি বছর আমি আমার জন্মদিন নিয়ে প্রবল উৎসাহিত থাকি, হ্যাঁ নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে বলব এই ৩১ এও আমার জন্মদিন নিয়ে উৎসাহে কোন ঘাটতি নেই আর আগামী যতগুলো বছর বাঁচবো একই উৎসাহপ্রথা চলতে থাকবে এ কথা হলফ করে বলতে পারি ৷ আগষ্ট মাস পড়লেই আমার মনে হতে থাকে ১২ তারিখ আসছে আসছে , মা'কে মনে করানোর দরকার পড়ে না , তিনি তো আমার এক কাঠি ওপরে ৷কিন্তু আমার ভুলো বরটা যাতে কোনভাবেই না ভোলে তার প্রস্তুতি পুরোপুরি নিয়েনি ৷ না বাবা , বর জন্মদিন ভুলে যাবে , তারপর জন্মদিনের সারাদিন মুড অফ করে মান - অভিমান করব, ঐ সব চক্কোরে আমি নেই ৷ তাই সপ্তাখানেক আগে থেকেই কাউন্টডাউন চালাতে থাকি ৷ যদিও ওর জন্য ঐদিন ভোলা খুব একটা সহজ না , একই দিনে বউ আর মা'র জন্মদিন হলে , সেইদিনটি ভোলা একটু চাপের ৷ প্রতি বছর কুমার বাহাদুর ঘোর চ...