Skip to main content

মা Day

ছোটবেলায় একটা গপ্পো পড়েছিলুম বিদ্যাসাগর মহাশয় মা'র সাথে দেখা করতে যাবেন বলে দুরন্ত দামোদর সাঁতরে পার হয়েছিলেন, আমি না বিদ্যাসাগর না আমি জানি সাঁতার ... তবে হ্যাঁ, মা'র কাছে যাওয়ার তাগিদটা একদম ষোলো আনা, এক কড়িও ফাঁক নেই তাতে৷ সারা সপ্তাহের ব্যস্ততার মধ্যে, একটা দিন মা'র, ওই দিনটায় আমার পুরোটাই মা'র৷ আজ ছিল সেই মাday৷ এদিকে সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার, আর ক্ষণে ক্ষণে অশ্রুপাত৷ ভাবলাম বিকেলে ঠিক কমে যাবে৷ ও বাবা!!! কোথায় কী??? ৩-৩.৩০ বাজতে না বাজতে আকাশ বাবু হাত পা ছড়িয়ে দেদার কান্না জুড়লেন ..., ঝমাঝম ঝমাঝম ঝমাঝম৷ কিন্তু ঠিক যখন করেছি মা'র কাছে যাব, যাবই যাব, কেউ বাধতে পারবে না৷ আমার নতুন বাবা-মা কখনই কোনকিছুতেই বাধা দেন না৷ বাবা শুধু কুমার বাহাদুরকে বললেন, "আজ আর গাড়ী নিয়ে ওকে পৌছতে যাস না, বাসে যাস৷" কিন্তু সে তো সেসব শোনার পাত্র না, বলল, "না না , কিচ্ছু হবে না৷" আপাদমস্তক দুজনে রেনকোট পরে, ঝমাঝম বৃষ্টিতে আমাদের উড়ুক্কুযানে চড়ে বেরিয়ে পড়লুম৷ এখানে ওখানে জল থৈ থৈ, ওপর থেকে অবিরাম বারিধারা, ঠান্ডা হাওয়া, চোখে মুখে বৃষ্টির ছাট ... অদ্ভুত একটা ভালোলাগা৷ একসাথে বৃষ্টি ভেজার ভালোলাগা ... ভিজতে ভিজতে চলন্তি উড়ুক্কুযানে চড়ে চলার ভালোলাগা ... গাড়ি চালাতে চালাতে rear view এ আমার ভিজে কাক হওয়া দেখে কুমার বাবুর এক চিলতে হাসি দেখে ভালোলাগা .... মা হয়ত ধরেই নিয়েছে এত বৃষ্টিতে আজ আর মেয়ে আসবে না, তবু মন কি মানে..জানলার উঁকিঝুকি করার এক ফাকে আমায় দেখে যে আনন্দটা চোখেমুখে ফুটে উঠবে এটা ভেবেও একটা দারুণ ভালোলাগা ... বিনা কারণে খুশি হওয়ার ভালোলাগা ... ছোট ছোট মুহুর্তগুলোকে কুড়িয়ে গুছিয়ে এক আজলা ভালোলাগা৷

বাড়ীর গলিতে ঢুকতেই, দোতলার জানলা থেকে এক চাঁদ হাসি, পরিতৃপ্তির মুখ বেরিয়ে এলো, "এই যে আমার কাকতাড়ুয়া (কালো রেনকোটটি পড়লে ওরমই লাগে) ... আমিতো ভাবলাম আসতেই পারবি না৷ তাড়াতাড়ি গিয়ে এসব গুলো ছাড়, ঠান্ডা লেগে যাবে"

change করে এসে বসতেই দেখলাম, বিছানার ওপর গরম গরম পিঁয়াজি আর চা রেডি। বলল,
"তাড়াতাড়ি খা, ঠান্ডা হয়ে যাবে; তারপর চুলে তেল দিয়ে দেব, কি অবস্থা চুল গুলোর ... আর হ্যাঁ, বেশি পিঁয়াজি দিলুম না, রাত্তিরে তোর প্রিয় ছোট ছোট ময়দার রুটি আর কষা মাংস আছে।"

এই জন্যই তো মা, এই জন্যই তো হাজার কাজের ফাঁকে একটূ সময় বের করা, এইটুকু স্বাদকোরকের আরাম, চোখের আরাম, ল্যাদ খাওয়ার আরাম, গল্পবই পড়ার আরাম, কিছু না বলতেই সব ইচ্ছেপূরণ হওয়ার আরাম, মনের আরামের জন্যই তো মেঘ-বৃষ্টি-রোদ-ভীড়-শত ঝামেলা কাটিয়ে ছুটে আসা একদিন - দেড়দিন, দুবেলা-তিনবেলার জন্য ৷




Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব

পুরনো কাসুন্দি

সালটা ২০০৮, বাবা মারা যাওয়ার কিছু মাস পর, আমার পরম পূজনীয় জননী একটু সামলে উঠতেই, স্থির করলেন এখন থেকে ওনার জীবনে একম-অদ্বিতীয়ম লক্ষ্য হলো আমার বিয়ে দেয়া। ভেবেছিলো আমায় "পার" করেই সব কাজ মিটে যাবে, আমি খাবো বাঁশ এবং তিনি ড্যাং ড্যাং করে বাবার কাছে চলে গিয়ে সুখে - শান্তিতে করবেন স্বর্গবাস। তখনও কুমার বাহাদুরের আগমন ঘটেনি বলাই বাহুল্য। মাকে আমি বুঝিয়ে উঠতে পারতাম না যে, দেখে-শুনে বিয়ের জগতে আমার "দাম " নেই বললেই চলে। বিয়ের খদ্দেরদের ফর্সা, সুন্দরী, স্লিম এবং শিক্ষিত মেয়ে চাই। অনেকের আবার শিক্ষিত হলেও আপত্তি। সুতরাং সে গুড়ে রাশি রাশি বালি। তবুও মার অদম্য ইচ্ছে, শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা এবং ইমোশনাল কাতুকুতুর কাছে হার মেনে "দেখে-শুনে বিয়ে" পুজোর জোগাড়ে নেমে পড়ি। এই পুজোর সর্বপ্রথম নিয়ম, সুন্দর শাড়ি পরে, ভালো করে সাজুগুজু করে একটি ছবি তুলতে হবে।যাতে পাত্রপক্ষ ঝপ করে দেখে টপ করে পছন্দ করে ফেলে। তাই হলো সুন্দর সাজু গুজু এবং শাড়ী পরে ছবি তোলা হলো। এই ছবিটি যে কত জায়গায় ঘুরেছে তার ঠিক নেই। আত্মীয়-পরিজন, ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট, কুরিয়ার অফিস, খবরের কাগজের অফিস, ই-মেল

টিকিটপুরাণ

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কাটা আর টানটান রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস পড়া একই ব্যাপার। প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা, এই ফসকে গেল গেল হৃদকম্পে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আমাদের আজ টিকিট কাটার পর্ব ছিল। নিজেরাই কাটি। দায়িত্ব থাকে কুমার বাহাদুরের ওপর। কাল রাত্তির থেকে যুদ্ধ চলছে। প্রতিবার বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের whatsapp এ একটা গ্রূপ খুলে ফেলার দায়িত্বে থাকি আমি। যাওয়ার ঠিকানা বদলাতে থাকে , সঙ্গে গ্রূপের নামও। কাল রাত্তির থেকেই আমরা খুব উত্তেজিত, কারণ irctc র সাইট খুলে দেখা গেছে ৪ মাস আগে যে তারিখের টিকিট বুক করা যাচ্ছে, সেটা সেদিনই ওয়েটিং এ চলে যাচ্ছে। তাই একদম ঝপাঝপ কাজ সারতে হবে। নানা রকম আলোচনায় রাত্তির থেকে whtsapp এর গ্রূপ উত্তাল। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত, লক্ষ একটাই,কনফার্ম টিকিট চাই-ই চাই। সবার স্নায়ু টান টান কাল কি হবে, একেবারে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল খেলার মতন। রাতে শুয়েই পড়েছি হঠাৎ whtsapp গ্রূপে অংশুমানের মেসেজ রাত ১২ টার পর টিকিট কাটা যাবে মনে হয়। মেসেজ পড়া মাত্রই কুমার বাহাদুর ঝপ করে উঠে ল্যাপটপ খুলে বসল কিন্তু কোথায় কি !!! আবার অংশুমানের মেসেজ," না ১২ টা