দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতোই হতে পারতো আমাদের। শুরু হয়েওছিলো অন্য দিনগুলোর মতন করেই। সকালের হুড়োহুড়ি, স্কুল-কলেজে বেড়োনোর তাড়ায় কাজগাছনোর জন্য ছোটাছুটি। সব মিটিয়ে ঘরে এসে চটপট রেডি হচ্ছি, কুমারের ব্যাগে টিফিন ঢুকিয়ে ভিজে চুলকে যা হোক করে গুটিয়ে ক্লিপের অনুসন্ধান চালাচ্ছি, ওমা কুমারের দিকে তাকাতে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত একটা হাসি দিচ্ছে। তাড়াহুড়োর সময় এসব দেখলে মাথার পারদ টা চড়চড় করে ওপরের দিকেই ওঠে, খুব স্বাভাবিক ভাবে চেঁচিয়ে বললামঃ
"কি হলোটা কি ??? দেখছ কি হাঁ করে?? এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে!!!"
একই রকম অদ্ভুত হাসির রেশ বজায় রেখে বলল, "যাবে আজ স্কুল?"
"মানে?"
মানে এমনিই দেরী হয়ে গেছে, পৌঁছতে আরো সময় লাগবে। তারচেয়ে আমিও আজ কলেজ ডুব দি তুমিও স্কুল গুলি মারো, চলো সিনেমা দেখে আসি।
একই রকম অদ্ভুত হাসির রেশ বজায় রেখে বলল, "যাবে আজ স্কুল?"
"মানে?"
মানে এমনিই দেরী হয়ে গেছে, পৌঁছতে আরো সময় লাগবে। তারচেয়ে আমিও আজ কলেজ ডুব দি তুমিও স্কুল গুলি মারো, চলো সিনেমা দেখে আসি।
এরম পরিকল্পনা শুনে মাথার পারা দপ করে নেমে একদম ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল। কিন্তু এটা কি ঠিক । তাই আমতা আমতা করে বললুম, "না না এটা ঠিক না!!"
মুখে ঠিক না বললেও, কথাটা বলার সময় আমার বলার ধরণ এবং মুখের হাসি কুমারের মতের সাথেই তাল মেলাচ্ছিল । খোঁজ শুরু হলো ইন্টারনেটে কোথায় কি সিনেমা চলছে।কোথাওই সেরম দেখার মতন কিছুই চলছিল না। হতাশ হয়ে কুমার কইলেন, "ছাড়ো, চলো তোমায় স্কুলে নামিয়ে আমি কলেজ চলে যাই।"
শুধু একখান ভালো সিনিমা চলছে না বলে এমন একখানা পাজি উদ্দেশ্য কখন বানচাল হয়ে যেতে পারে!!! মোটেই না। বললুম সিনিমা চলছে না তো কি হয়েছে চলো এমনিই বেড়িয়ে পরি। যেদিক খুশি সেদিক যাবো।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। স্কুল-কলেজ যাওয়ার ব্যাগ সাথে নিয়ে, আমাদের উড়ুক্কু যানে সওয়ার হয়ে পারি দিলুম নিশ্চিন্দিপুরের উদ্দেশ্যে। প্রকৃতিও সেদিন আমাদের সাথে তালে তালে মিলিয়ে ছিল। কখনো মেঘলা, কখনো ঝিপি ঝিপি বৃষ্টি আবার কখন কটকটে রোদ। এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে পৌঁছলাম ব্যান্ডেল চার্চ। ব্যান্ডেল চার্চের পাশ দিয়ে একফালি রাস্তা চলে গেছে, সেখান দিয়ে অনেকটা হেঁটে একটা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে পৌঁছলাম গঙ্গার এক চড়ায়। অদ্ভুত সুন্দর জায়গা।একদিকে খানিক আগে হয়ে যাওয়া বৃষ্টি ভেজা সবুজ নরম ঘাস, আর একদিকে প্রচণ্ড হাওয়ায় নদীতে ছোট ছোট ঢেউ। ধপ করে বসে পড়লুম। মুগ্ধ হয়ে দেখছি আর ভাবছি হাতের এত কাছে এত অপূর্ব একটা জায়গা অথচ জানতুমই না। ভাবতে ভাবতেই আবার একপশলা বৃষ্টি এসে হাজির। নদীর জলে অঝোরে ঝরা বৃষ্টির ফোঁটা, সবুজ ঘাসের চড়া,দুই বন্ধু যারা একে অপরের ভালোবাসায় বন্ধুত্বে মুগ্ধ-পরিপূর্ণ, হাতে হাত-কাঁধে মাথা, আসে পাশে অন্য কোন মানুষের লেশ মাত্র নেই, অঝোরে বৃষ্টি। এখানেই থেমে থাক সবকিছু....সবটুকু
কিন্তু তা তো হইবো না ওখানে খানিক সময় কাটিয়ে চলে এলুম ইমামবাড়ায়। বান্ডেল চার্চ যতটা সুন্দর গোছানো, ইমামবাড়া ততটাই অগোছাল ছড়ানো ছেটানো। ইমামবাড়া থেকে ঘুরে,জগন্নাথ ঘাটে এসে খানিক আড্ডা মেরে, এক রেস্তোরায় জমিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে ফিরে এলুম ডেরায় ঠিক স্কুল কলেজ থেকে ফিরে আসার সময়ের মধ্যে।
বান্ডেল চার্চে দেখলুম অনেক স্কুল, কলেজ পড়ুয়া কপোত কপোতি নিভৃতে সময় কাটাচ্ছে। কুমারকে বললুম, "দেখো কি অবস্থা সব, স্কুল কলেজে না গিয়ে এখানে সব ঘুরতে এসেছে।"
"কুমার একখানি মিচকে হাসি দিয়ে কহিলেন , আমরাও তো ওদেরই দলে !!"
"কুমার একখানি মিচকে হাসি দিয়ে কহিলেন , আমরাও তো ওদেরই দলে !!"
চিরকালই বড্ড ভালো ছেলে মেয়ে আমরা। স্কুল কলেজ এ সময় মতন যাওয়া বাড়ি ফেরা, সময়ে পড়াশোনা করা একদম মাপে মাপে সব।লোকজন যা ১৮-১৯ শে করে, আমরা ৩২ সে করলাম। কলেজে পড়তে আলাপ না হওয়ার আফশোস অনেকটাই কাটিয়ে ফেললুম।
(বি.দ্র. কুমার বাহাদুর বাড়ি ফিরেই বলল, এটা নিয়ে আজই লিখে ফেলো না যেন। পরে কখনও লিখো। তাই এটা কোনো একটা দিনের গল্প, কবের ঠিক জানা যায় না )
Comments
Post a Comment