Skip to main content

জোড়া জন্মদিন

জন্মদিন মানে মার একটু বেশি আবদার-অধিকার-ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল, জন্মদিন মানে বন্ধুদের মন ভালো করা শুভেচ্ছা, জন্মদিন মানে কুমার বাহাদুর কে আরেকটু বেশি অত্যাচার করা , জন্মদিন মানে দুই বাড়ির সবার থেকে আর একটু বেশিই আদরে উচ্ছনে যাওয়া, জন্মদিন মানে বাকি ৩৬৪ দিনের থেকে একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা, সারাদিন মনের মধ্যে মিষ্টি মিষ্টি ভাব।
এই ১২ই আগস্ট তারিখ টা আমাদের কুমার নিবাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই একই তারিখে এই বাড়ির তিন প্রজন্মের তিন জনের জন্মদিন। আমার দাদু ইন ল, মা ইন ল আর আমার। দাদুকে আমি দেখিনি। কুমার তখন বেশ ছোটই যখন দাদু মারা যান। বাবা-জেঠুর কাছে শুনেছি দাদুর জন্মদিন এই তারিখেই। দাদুকে পাই না কিন্তু আমার আর মার যুগ্ম জন্মদিনটা বেশ ভালোই কাটে।
ওদিকে আবার আমার মাতৃদেবীর আদেশ সারাবছরের ঐদিনটা তেনার, তিনি কাউকে ভাগ দিতে পারবেন না। দু দিকেই দেখতে হবে, দুদিকে দুই মার ইমোশন। তাই একটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করি। প্রতি বছরই আমি আগের দিন রান্না করে মাকে খাওয়াই। রাত্রে কেক বানিয়ে রাখি, পর দিন সকালে পায়েস করে, বাড্ডে গার্লকে কেক পায়েস খাইয়ে, পারি দি মার কাছে।
মা এখন সবকিছুই ভুলে যায়। নিজের জন্মদিনটাও পরশু দুপুরে যখন সব গুছিয়ে খেতে দিয়েছি, অবাক হয়ে জিগেস করলো,
"কি রে, এত কিছু কেন??"
"কাল তোমার জন্মদিন তো, আমি তো থাকবো না, তাই আজ একটু রান্না করে খাওয়াতে ইচ্ছে হলো আমার।"
"তাই, কাল আমার জন্মদিন, তুই কোথায় যাবি?? স্কুল??"
"না, কাল তো রোববার, স্কুল তো ছুটি। আমি মা র কাছে যাবো, কাল তো আমা..."
"ওহ, কাল তো তোর ও জন্মদিন, দেখেছিস ভুলেই গেছি।"
অন্যদিন খাবো না খাবো না করে, সেদিন কিন্তু কিচ্ছুটি না বলে গুছিয়ে সবটা খেলো।
জানি খানিক পরেই সব ভুলে যাবে। তাতে কি, এই মুহূর্তের চোখেমুখের তৃপ্তি, মার মুখের মন ভালো করা হাসি দেখে আমারো জন্মদিনের অগ্রিম উপহারটা পাওয়া হয়ে যায়।
জন্মদিনের সাথে জন্মদিনের উপহারও অতপ্রোত ভাবে জড়িত। আমার দুই মা-বাবা- কুমার- দুই বাড়ির সবার-বন্ধুদের ষোলো আনা খাঁটি ভালোবাসা-আদর-শুভকামনার মোড়কে আন্তরিকতার যে উপহার পাই, তার অপেক্ষাতেই এই বয়সেও সারাবছর এই দিনটার জন্য কর গুনি, প্রতীক্ষায় থাকি সবকিছু একটু একটু বেশি পাওয়ার আকাঙ্খায়।

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব...

চিরসখা "সন্দেশ"

কাল সন্ধ্যেয় নানা রকম গপ্পের মধ্যে কথায় কথায় "সন্দেশ" এর কথা উঠলো। কুমার বাহাদুরের জীবনে দুরকম সন্দেশই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা মোটামুটি ওর কাছের লোকজন সবাই জানে। এক সন্দেশে তার উদরতৃপ্তি ঘটে আরেক "সন্দেশ" তার মনের আরামের খোরাক। সেই ৯৫ সালে মেজপিসি "সন্দেশ" পত্রিকার গ্রাহক করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই কুমারের অন্তরতম সঙ্গী হয়ে ওঠে "সন্দেশ"। গত ২৫ বছরের সন্দেশের সব সংখ্যাই আছে বোধকরি ওর সংগ্রহে আছে। এখনো অন্যান্য যেকোনো পুজোসংখ্যার আগে "সন্দেশ" কবে বেড়োচ্ছে সে খবর জোগাড়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে। আমায় আগেও বলেছিলো, কাল যখন "সন্দেশ" এর কথা উঠলো, হঠাৎ মনে পড়ে গেলো। জিগালুম,  সন্দেশে তোমার একবার লেখা বেড়িয়েছিলো না??? হ্যাঁ, হাত পাকাবার আসরে। তোমার কাছে আছে সেই সংখ্যাগুলো?? থাকবে না কেন!! বের করোতো। এমনিতে তো ভুলোরাম, কোথায় কি রাখে দুমিনিট অন্তর ভুলে যায়, কিন্তু নিজের আজীবন দোসরদের খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র দেরী হয় না। বলতে না বলতে নিয়ে চলে এলো। ৪ টে গল্প বেড়িয়েছিলো, একটা গল্পের সাথে একটা ছবিও ছিল কিন্তু সেটা কোনো কা...

পুরনো কাসুন্দি

সালটা ২০০৮, বাবা মারা যাওয়ার কিছু মাস পর, আমার পরম পূজনীয় জননী একটু সামলে উঠতেই, স্থির করলেন এখন থেকে ওনার জীবনে একম-অদ্বিতীয়ম লক্ষ্য হলো আমার বিয়ে দেয়া। ভেবেছিলো আমায় "পার" করেই সব কাজ মিটে যাবে, আমি খাবো বাঁশ এবং তিনি ড্যাং ড্যাং করে বাবার কাছে চলে গিয়ে সুখে - শান্তিতে করবেন স্বর্গবাস। তখনও কুমার বাহাদুরের আগমন ঘটেনি বলাই বাহুল্য। মাকে আমি বুঝিয়ে উঠতে পারতাম না যে, দেখে-শুনে বিয়ের জগতে আমার "দাম " নেই বললেই চলে। বিয়ের খদ্দেরদের ফর্সা, সুন্দরী, স্লিম এবং শিক্ষিত মেয়ে চাই। অনেকের আবার শিক্ষিত হলেও আপত্তি। সুতরাং সে গুড়ে রাশি রাশি বালি। তবুও মার অদম্য ইচ্ছে, শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা এবং ইমোশনাল কাতুকুতুর কাছে হার মেনে "দেখে-শুনে বিয়ে" পুজোর জোগাড়ে নেমে পড়ি। এই পুজোর সর্বপ্রথম নিয়ম, সুন্দর শাড়ি পরে, ভালো করে সাজুগুজু করে একটি ছবি তুলতে হবে।যাতে পাত্রপক্ষ ঝপ করে দেখে টপ করে পছন্দ করে ফেলে। তাই হলো সুন্দর সাজু গুজু এবং শাড়ী পরে ছবি তোলা হলো। এই ছবিটি যে কত জায়গায় ঘুরেছে তার ঠিক নেই। আত্মীয়-পরিজন, ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট, কুরিয়ার অফিস, খবরের কাগজের অফিস, ই-মেল...