Skip to main content

প্রেম ও কবিতা

রবিবার রাত ১১.৩০। কুমার আমার সতীনে ডুবে৷ চার-পাঁচটা সতীন খাটে ছড়িয়ে, তাদের নিয়ে মশগুল৷ এক নম্বর সতীন পুজোবার্ষীকি আনন্দমেলা, দুনম্বর দেশ পত্রিকা, তিন নম্বর রবিবারের আনন্দবাজারের রবিবাসরীয় etc etc etc...

আমি টিভিতে আমার প্রিয় হাসির অনুষ্ঠানে বুঁদ ৷ গল্পটায় দেখাচ্ছে, একজন বউ তার বরকে জেরা করছে যে সে কেন তাকে নিয়ে কখন কোন কবিতা লেখে না, আচমকা প্রশ্নে বর চমকে চ ৷ দেখতে দেখতে হঠাৎ আমারও মাথায় বদ বুদ্ধি চাপল। কুমারকে শুধলাম, "তুমি আমায় নিয়ে কিছু লেখো না কেন? আমি কতঅঅ কিছু লিখি৷"
কুমার আচমকা প্রশ্নে, সতীনদের থেকে মনসংযোগ এক সেকেন্ডের জন্য সরিয়ে বলল,"আমি কি পারি বলো তোমার মত অত ভালো করে গুছিয়ে লিখতে!" বলেই সতীনের কাছে ফিরে গেলেন ...
আমিও  ছাড়ব না,"খালি বাজে কথা, political কিছু , বিজ্ঞান নিয়ে যখন এত্ত ভালো ভালো লেখো , তার বেলা ?"
"আরে ওসব তো অন্যরকম । আমি তোমায় নিয়ে যা ভাবি , তা কি বলে বা লিখে বোঝাতে হবে ?" সতীনের দিকে মন দিয়েই বলে চলল।
"খালি ডায়লগ ... তুমি জানো এককালে কেউ একজন ছিল যে আমায় নিয়ে সত্যি ভালোবেসে কবিতা লিখত ..."
কুমার বাহাদুর নিজের মধ্যে শাহরুখ খানীয় সত্ত্বা জাগীয়ে বলে উঠল, "সে তোমায় নিয়ে যে যতই কবিতা লিখুক, আমার চেয়ে বেশি ভালো আর কেও বাসতে পারবে নি।"
অনেক কষ্টে হাসি আটকে বললাম, "ফাকিবাজী করলে হবে না মশাই , শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজবে না।"
"তাই নাকি! তা কে কি লিখেছিল শুনি এককালে?"
"নাহ্, থাক!"
"না না বলোই না"
"লিখেছে লিখেছে, খুব ভালো ভালো লিখেছে, সওব লেখা আছে ডায়েরিতে৷"
"তা বলই না একটা দুটো"
"হুমমম । লিখেছিল ... আমার চোখ গভীর ঘন কালো মায়াজালে ঢাকা ... চুল বৃষ্টির মতন ... আরও কত কি...মনে নেই অত৷"
"চোখ ... গভীর ... ঘন ... কালো ... মায়াজালে ... ঢাকা! মানে তখন কি তোমার ছানি অপারেশন হয়েছিল নাকি? না তা কি করে হয়, অত অল্প বয়সে ..."
"মানে?"
"মানে, ছানি অপারেশনের পরই তো ঐ কালো মোটা চশমা দেয় ... আর তখনই চোখ কালো গভীর ঘন জাল নয় অবশ্য কাঁচে ঢাকা থাকে। আর চুল বৃষ্টির মতন মানে বুঝেছ?"
আমি হাসির দমক সামলে বললাম, "তুমিই বোঝাও"
"আরে বৃষ্টি কি হয়?"
"কি হয়?"
"পড়ে । বৃষ্টি যেমন পড়ে , তোমার চুলও তেমন পড়ে যাচ্ছে; সেটাই বলতে চেয়েছে ,বুঝলে?"
"তারমানে এক কথায় কি দাঁড়াল? "
"কিছুই না। তুমি এতদিন পোস্ট ছানি অপারেশনের অবস্থা এবং চুল ঝড়ে পড়া নিয়ে একটা কবিতাকে প্রেমের কবিতা ভেবেছিলে, আমি সেই ভুল ভাঙিয়ে, ঠিক করে বুঝিয়ে দিলাম৷ আমি তোমায় কত্ত ভালোবাসি তাহলেই বোঝ? কি বলো? বাক্যিহারা হয়ে পড়লে নাকি!"

উফফ, বাপরে বাপ ... হাসতে হাসতে চোয়ালে ব্যথা আর পেটে খিঁচ ধরে গেলরে বাবা ... সত্যিই এই লোকটির থেকে বেশী ভালো কেই বা বাসতে পারে! কবিতার কোন প্রয়োজনই পড়ে না যখন দিনের শুরু আর শেষ এমন চোয়াল ব্যথা ধরানো হয়৷ কেই বা পারে সারাদিনের ক্লান্তির মেঘ এইভাবে এক ঝটকায় হাসাতে হাসাতে গায়েব করে দিতে পারে ... কেউ না ... কেউই না৷


Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব

টিকিটপুরাণ

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কাটা আর টানটান রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস পড়া একই ব্যাপার। প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা, এই ফসকে গেল গেল হৃদকম্পে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আমাদের আজ টিকিট কাটার পর্ব ছিল। নিজেরাই কাটি। দায়িত্ব থাকে কুমার বাহাদুরের ওপর। কাল রাত্তির থেকে যুদ্ধ চলছে। প্রতিবার বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের whatsapp এ একটা গ্রূপ খুলে ফেলার দায়িত্বে থাকি আমি। যাওয়ার ঠিকানা বদলাতে থাকে , সঙ্গে গ্রূপের নামও। কাল রাত্তির থেকেই আমরা খুব উত্তেজিত, কারণ irctc র সাইট খুলে দেখা গেছে ৪ মাস আগে যে তারিখের টিকিট বুক করা যাচ্ছে, সেটা সেদিনই ওয়েটিং এ চলে যাচ্ছে। তাই একদম ঝপাঝপ কাজ সারতে হবে। নানা রকম আলোচনায় রাত্তির থেকে whtsapp এর গ্রূপ উত্তাল। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত, লক্ষ একটাই,কনফার্ম টিকিট চাই-ই চাই। সবার স্নায়ু টান টান কাল কি হবে, একেবারে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল খেলার মতন। রাতে শুয়েই পড়েছি হঠাৎ whtsapp গ্রূপে অংশুমানের মেসেজ রাত ১২ টার পর টিকিট কাটা যাবে মনে হয়। মেসেজ পড়া মাত্রই কুমার বাহাদুর ঝপ করে উঠে ল্যাপটপ খুলে বসল কিন্তু কোথায় কি !!! আবার অংশুমানের মেসেজ," না ১২ টা

মা

শীতকাল মানেই গরম গরম লেপে পা ঢুকিয়ে গল্পের বই পড়া। মার হাতের কড়াইশুটির কচুরী- আলুরদম আর ফুলকপি - নতুন আলু - টমেটো- মটরশুটি দিয়ে গরম গরম খিচুড়ি খেয়ে রসনাতৃপ্তি করা। ট্রাঙ্ক থেকে বের করা ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখানো সোয়েটার,চাদর আর মার গা থেকে পন্ডস ক্রিম মাখানো মা মা গন্ধ। দু হপ্তা হয়ে গেল নানান ঝামেলায় মার কাছে যাওয়াই হচ্ছে না। আজ সকালে থেকেই বড্ড মা পাচ্ছে। ধুত্তোর চুলোয় যাক সব কাজ আজ মার কাছে যাবোই যাবো। ফোন লাগলাম মাকে, "আজ আমি আসছি।" গমগমে হাসি হাসি গলা বলে উঠলো, "কখন আসবি?? গরম জামাকাপড় কিছু বয়ে বয়ে আনিস না, আমি সব বের করে, রোদ খাইয়ে রেখেছি। স্কুল থেকে বেরোনোর সময় একটা ফোন করে দিস।" "আচ্ছা।" স্কুল থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই দেখলাম রোদ থেকে তুলে নিয়ে আসা গরম গরম বালাপোস আমার দিকে আকুল নয়নে তাকিয়ে আছে। যা যা ঠান্ডায় পরার জামাকাপড় ছিল, সব লাইন দিয়ে সাজানো। কারণ মাতৃ মাপক যন্ত্র অনুসারে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে এবং ঠান্ডা আরো বাড়বে তাই, যাবতীয় গভীর ঠান্ডায় পড়া জামাকাপড় রা ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে সূর্যালোকে গা তাতিয়ে আমার অপেক্ষায় রয়েছে, কখন তাদের পরে আমি ধন্য করবো