Skip to main content

হিজি বিজ্ বিজ্ এবং প্রেম

এই অসহ্য লোকটার কথা ভেবে ভেবে আমার সমস্ত ভালো ভালো গানের ভালো ভালো কথা সুর কানে এবং মনে বাজে। আর ঐ লোকটা সব সুর তাল ঘেঁটে ঘ করে দেয়। এই দুদিন আগে, ওর জন্মদিনের দিন সব কাজ মিটিয়ে বসেছি। মন টা বেশ ভালো লাগছে যা যা রান্না করবো ভেবেছিলাম, সব করেছি। বেশ ভালোই হয়েছে। সারপ্রাইজ গিফ্ট টা দিয়ে একদম চমকে দিয়েছি। সবকিছু একদম যেমন যেমন চেয়েছিলাম তেমন তেমন ই হয়েছে। ভালো করে স্নান করে, ফ্রেশ হয়ে টেবিল ফ্যান টা চালিয়ে একটু জিরোচ্ছি, খুব গান শুনতে ইচ্ছে হলো, বেশ ভালোবাসার গান। আমার ফোনের ওই হেডফোন গোজার পোর্টটা শট হয়েবসে আছে। তাই স্পিকারেই চালালামঃ ইয়ে লাল ইশক
"মেরা নাম ইশক, তেরা নাম ইশক,
মেরা নাম ইশক, তেরা নাম ইশক
মেরা নাম ইশক, তেরা নাম ইশক
মেরা নাম তেরা নাম, মেরা নাম ইশক"

আহা শুনতে শুনতে পুরো ডুবে গেছি। অসাধারণ গান, গানের কথা, সঙ্গে অরিজিতের গলা, পাশে কুমার বসে ফোন এবং গল্প বইয়ে ব্যস্ত, তার দিকে চেয়ে চেয়ে পরানে ডগমগ করা প্রেম প্রেম ভাব ... উফফ আর কি চাই। তখনই ... "এই শোনো"
কিছু না বলে ভুরু কুঁচকিয়ে এবং উঁচিয়ে জানতে চাইলুম, "কি?"
"এই যে ইনি, যিনি গান গাইছেন তিনি কি হিজি বিজ্ বিজ্?"
"বাজে বকছে বুঝে ইগনোর করে আবার গানে ডোবার চেষ্টা করছি, আবার খোঁচাল।"
গেলো মেজাজ টি টং হয়ে। বললুম "আমার গান শোনার সময়ই তোমার যত এডিংবিডিং প্রশ্ন কুটকুট করে না?"
আরে না গো, তোমার এই গানটা শুনেই মনে হলো "সুকুমার রায়ের হিজি বিজ্ বিজ্। পড়নি তুমি?"
এসব বাজে কথা শোনায় আমার কোনরূপ মনোবাঞ্ছা ছিলো না, ফলত পাশবালিশ টাকে বাগিয়ে গানটা বন্ধ করে শুয়ে পড়লুম।
কিন্তু ওই অসহ্য লোক তো থামবার নয়, তার বেতান্ত তো তিনি শুনিয়েই ছাড়বেন... "আরে শোনো না দেখো রাগ করো না, কিন্তু জানতো ওই হিজি বিজ্‌ বিজ্‌ কে নাম জিগেশ করলে বলতো 'আমার নাম হিজি বিজ্‌ বিজ্‌, আমার ভায়ের নাম হিজি বিজ্‌ বিজ্‌, আমার বাবার নাম হিজি বিজ্‌ বিজ্‌, আমার পিসের নাম হিজি বিজ্‌ বিজ্।...' তো তোমার এই গানটাও তো তেমনই, নিজের নাম ইশক বলছে, তোমার নাম ইশক বলছে, সবার নাম ইশক বলছে। তাই জানতে চাইলুম, হিজি বিজ্ বিজ্ ফিরে এলো কিনা!"

এরপর আর কিই বা বলার থাকতে পারে। এই তো কপাল আমার, যার কথা ভেবে ভেবে আমার ফোনে, আইপ্যডে, ল্যাপটপে এতওও ভালোবাসার গানের ভান্ডার উপচে উপচে পরে, সে হতচ্ছাড়া কিনা প্রেম কে হিজি বিজ্ বিজ্ বলে!

Comments

Popular posts from this blog

একটা চেয়ার আর কিছু গল্পকথা

দোলনা চাপতে কার না ভালো লাগে....আমার তো ছোটবেলা থেকেই দোলনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ...কিন্তু মুশকিলটা ছিল মানুষটা আমি ছোট থেকেই বেশ মোটাসোটা, ফলত দোলনা চাপলেই আশপাশ থেকে কেউ না কেউ বলে উঠত "এইরে দোলনাটা ভেঙে পড়ল বলে" বা "দোলনাটা হাতিদের চড়ার জন্য নয়" আরও কত কি...খুব কষ্ট হত.... কষ্টে ঝপাং ঝাপ দিয়ে নেমে পড়তাম। তখন কলেজে পড়ি...আমার সবথেকে ভালো বন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে একটা পার্ক ছিল...প্রথম দিনই ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলাম ওই পার্কটিতে দুটো দোলনা আছে এবং যার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল "২-৫ বছরের শিশুদের জন্য" ... তাতে কি !!! প্রথম ভালোবাসার টানে মানুষ সব অন্যায় করতে পারে ... যেদিন ওদের বাড়ীতে রাত্তিরে থাকতাম ... ৬টার পর পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ... অন্ধকারে ছোট পাঁচিল টপকে আমরা পার্কে ঢুকতাম ... আর মনের আনন্দে আমি দোল খেতাম ... ভাবলাম কি ভালো ... কেউ কিছু বলার নেই বারণ করার নেই ... কোন সময় সীমা নেই যতখুশি যতক্ষণ খুশি দোল খাও। এইভাবে ২-৩ বার সাধ পুরণের পরই ... একদিন পার্কের পাশের বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল "কে?? কেএএএ? কারা পার্কে?? প্রায়ই পার্ক বন্ধ হব

টিকিটপুরাণ

পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কাটা আর টানটান রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস পড়া একই ব্যাপার। প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা, এই ফসকে গেল গেল হৃদকম্পে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। আমাদের আজ টিকিট কাটার পর্ব ছিল। নিজেরাই কাটি। দায়িত্ব থাকে কুমার বাহাদুরের ওপর। কাল রাত্তির থেকে যুদ্ধ চলছে। প্রতিবার বেড়াতে যাওয়ার আগে আমাদের whatsapp এ একটা গ্রূপ খুলে ফেলার দায়িত্বে থাকি আমি। যাওয়ার ঠিকানা বদলাতে থাকে , সঙ্গে গ্রূপের নামও। কাল রাত্তির থেকেই আমরা খুব উত্তেজিত, কারণ irctc র সাইট খুলে দেখা গেছে ৪ মাস আগে যে তারিখের টিকিট বুক করা যাচ্ছে, সেটা সেদিনই ওয়েটিং এ চলে যাচ্ছে। তাই একদম ঝপাঝপ কাজ সারতে হবে। নানা রকম আলোচনায় রাত্তির থেকে whtsapp এর গ্রূপ উত্তাল। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত, লক্ষ একটাই,কনফার্ম টিকিট চাই-ই চাই। সবার স্নায়ু টান টান কাল কি হবে, একেবারে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল খেলার মতন। রাতে শুয়েই পড়েছি হঠাৎ whtsapp গ্রূপে অংশুমানের মেসেজ রাত ১২ টার পর টিকিট কাটা যাবে মনে হয়। মেসেজ পড়া মাত্রই কুমার বাহাদুর ঝপ করে উঠে ল্যাপটপ খুলে বসল কিন্তু কোথায় কি !!! আবার অংশুমানের মেসেজ," না ১২ টা

মা

শীতকাল মানেই গরম গরম লেপে পা ঢুকিয়ে গল্পের বই পড়া। মার হাতের কড়াইশুটির কচুরী- আলুরদম আর ফুলকপি - নতুন আলু - টমেটো- মটরশুটি দিয়ে গরম গরম খিচুড়ি খেয়ে রসনাতৃপ্তি করা। ট্রাঙ্ক থেকে বের করা ন্যাপথলিনের গন্ধ মাখানো সোয়েটার,চাদর আর মার গা থেকে পন্ডস ক্রিম মাখানো মা মা গন্ধ। দু হপ্তা হয়ে গেল নানান ঝামেলায় মার কাছে যাওয়াই হচ্ছে না। আজ সকালে থেকেই বড্ড মা পাচ্ছে। ধুত্তোর চুলোয় যাক সব কাজ আজ মার কাছে যাবোই যাবো। ফোন লাগলাম মাকে, "আজ আমি আসছি।" গমগমে হাসি হাসি গলা বলে উঠলো, "কখন আসবি?? গরম জামাকাপড় কিছু বয়ে বয়ে আনিস না, আমি সব বের করে, রোদ খাইয়ে রেখেছি। স্কুল থেকে বেরোনোর সময় একটা ফোন করে দিস।" "আচ্ছা।" স্কুল থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই দেখলাম রোদ থেকে তুলে নিয়ে আসা গরম গরম বালাপোস আমার দিকে আকুল নয়নে তাকিয়ে আছে। যা যা ঠান্ডায় পরার জামাকাপড় ছিল, সব লাইন দিয়ে সাজানো। কারণ মাতৃ মাপক যন্ত্র অনুসারে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে এবং ঠান্ডা আরো বাড়বে তাই, যাবতীয় গভীর ঠান্ডায় পড়া জামাকাপড় রা ট্রাঙ্ক থেকে বেরিয়ে সূর্যালোকে গা তাতিয়ে আমার অপেক্ষায় রয়েছে, কখন তাদের পরে আমি ধন্য করবো