মেয়েদের জীবনের যন্ত্রণার শেষ নেই। এই যে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা নিয়ম, বিয়ের পর ঘর বাড়ী ছেড়ে চলে যাও নতুন ঠিকানায়। কেউ কখনো ভেবে দেখেছে এর জন্য মেয়েদের কি কি সহ্য করতে হয়? শুধু মেয়েটি নয়, তাই পরিবারের সকলকে কি কি সম্যসার মুখোমুখি হতে হয় কেউ ভাবতেই পারবে না।
এই যে আমি, আমার বাবা-মার একটি মাত্র সলতে। আমার বিয়ের পর আমার বাবা তো এইসব ঝামেলায় যাবেন না বলে আগে ভাগেই শিফ্ট করে গেছেন অন্য জগতে, তো তাঁর কোনো সমস্যাই নেই, যত সমস্যা আমার মার। তিনি তো মেয়ের নামে দিন শুরু করেন এবং তার নামেই শেষ করেন। এইরকম এক জন মহিলাকে কত শত ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেবার পর, তা কি সমাজ বুঝবে???? বুঝবে না।
এতদিন আমার এসব বিষয়ে কিছুই মনে হয়নি। দু বাড়ি দিব্যি সামলেছি আমি। আর আমি এও দেখেছি বাজার,দোকান, ব্যাঙ্ক, সংসার সব একা হাতে দিব্যি সামলেছেন আমার মাতে। শুধু আমি না থাকায় আমায় না দেখার জন্য হৃদপুরের তার যে বিপুল পরিমাণে উচাটন হয় এবং মস্তিষ্কে যা আসে না ভেবে বলে যাওয়ার শ্রোতা তিনি পান না... ব্যাস শুধু এটুকুই। এটুকুও পুষিয়ে যায় প্রতি সপ্তাহান্তে দিন খানেক বা কখনো দিন দুয়েকের জন্য আমায় পেয়ে। তবে আজ এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যে আমি সত্যিই এটা উপলব্ধি করেছি, আমার কুমার নিবাসে চলে আসায় আমার বেচারা মা কত অসুবিধায় পড়েছে।
তাড়াহুড়োয় কাল যখন ফিরছি মার কাছ থেকে, মা বলেছিলো একটা আবেদন পত্র লিখে দিতে, ব্যাংকে র একটা দরকারে জমা দিতে হবে। আমি হাতের কাছে যাহোক একটা কাগজে, চট করে লিখে দিয়ে বললাম পরে তুমি ভালো করে একটা কাগজে লিখে নিও।
আজ মাকে ফোন করেছি, বললাম তোমার ব্যাঙ্কের কাজ মিটলো?? যা বলল, শুনেতো আমার অবস্থা আমিতো অবাক এন্টেনাতে কাকের মতন। মাতৃ দেবী গর্জন করে বলেন," মিটবে কি করে, পুরো বাড়িতে একটা সাদা কাগজ নেই, তুই তো তোর সব বই খাতা কাগজ পত্র নিয়ে চলে গেছিস, আমি পাবো কোথায় সাদা কাগজ। কাল একটা খাতা কিনব, তারপর আবেদন পত্র লিখে জমা দেব।"
কি নিষ্ঠুর সমাজ, এক মার থেকে একটা আবেদনপত্র লেখার শেষ সাদা পাতা টুকু অব্দি কেড়ে নেয়। ছিঃ
(বিঃদ্রঃ এই কাহিনী শুনে কুমার অতিশয় বিচলিত হয়ে পড়েছে, এবং সে পণ করেছে, কাল সকালেই এক দিস্তে সাদা কাগজ শাশুড়ির ঠিকানায় পৌঁছে দেবে, যাতে তিনি গুচ্ছ গুচ্ছ আবেদন পত্র লিখে ব্যাঙ্ক নামক মন্দিরে অঞ্জলি অর্পণ করতে পারেন)
Comments
Post a Comment